একদা দলের অনুগত কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন সময়ে-অসময়ে, সাফল্য-ব্যর্থতায় আঁকড়েছিলেন গেরুয়াশিবির। যখন কেউ ছিল না, তখনও তিনি ছিলেন, তাঁরা ছিলেন। তাই এতদিন দলীয় নেতৃত্বের ভুলত্রুটি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে বদলে গিয়েছে অনেকটাই। এবার সেসব পুরনো কর্মীদের বিরুদ্ধেই নেমেছে শাস্তির কোপ। শোকজ, দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার প্রকাশ্যে উগড়ে দিলেন যাবতীয় ক্ষোভ। বঙ্গে সংগঠনের দুর্বলতার জন্য দলীয় নেতৃত্বকেই দায়ী করলেন তিনি। এদিন জয়প্রকাশের বিস্ফোরক অভিযোগ, “বিধানসভা ভোটের ফল খারাপ কেন হল, এ নিয়ে দলীয় বৈঠকে কথা বলতে গেলেই চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি টার্গেট ছিল ২০০। বাংলায় ২৯৩ আসনের মধ্যে দু’শোটিতেই জিততে হবে, বঙ্গ বিজেপিকে এমনই টার্গেট বেঁধে দিয়েছিল দিল্লীর নেতৃত্ব। অমিত শাহ-সহ একাধিক নেতা বারবার প্রচারে ২০০ আসনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন। কিন্তু ফলপ্রকাশের দিন দেখা যায়, সাতাত্তরেই আটকে গিয়েছে পদ্মশিবির। ২০০ দূর অস্ত, একশোর গণ্ডি থেকে অনেকটা আগেই বসে গিয়েছে গেরুয়া রথের চাকা। জয়প্রকাশবাবুরা তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে গেলে শীর্ষ নেতৃত্ব চুপ করিয়ে দিয়েছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন। তাঁর মন্তব্য, “২০০’র জায়গায় যখন ৭৭-এ আমরা আটকে গেলাম, সেটা কেন হল, তার কোনও পর্যালোচনা হল না। ভারচুয়াল মিটিংয়ে এই কথা তুললে তাদের হয় চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে বা আইটি-কে বলে তাকে মিউট করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুথ স্তর থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত কর্মীদের একটাই কথা ছিল। কেন এমন হল, সেটা আপনারা দেখুন। কিন্তু সেটা না করে চাদর দিয়ে চেপে দেওয়া হল। চাদর চাপা দিয়ে রোগ সারানো যায় না।”
উল্লেখ্য, রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সকলকে একযোগে বিঁধেছেন বরখাস্ত হওয়া নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। কেন রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে পারল না বিজেপি, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর মত, “মহার্ঘ্য জায়গায় একদিন কর্মীদের ডেকে এনে তাঁদের কথা না শুনে শুধু কী করতে হবে, এটা বলে একটা দল ক্ষমতায় আসতে পারে না। শুভেন্দুবাবুকে কোট করে বলছি যে অন্তত ৩২ টি সাংগঠনিক জেলায় এমন সভাপতি যে জেলার লোকেরাই তাঁদের চেনে না। যে প্রক্রিয়ায় নতুন কমিটি করা হল, তার কেউ দায় নিতে চাইছেন না। কারণ, কাজের লোকের থেকে কাছের লোক – এই তত্ত্বে এই কমিটি তৈরি হয়েছে। বহু অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোককে বলা হয়েছে যে তোমরা এখন কাজ করো না।”
পাশাপাশি, বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকেও নিশানা করেছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। চার পুরসভার আসন্ন নির্বাচনী লড়াই নিয়ে তাঁর মত, “চার জায়গায় নির্বাচন চলছে, সেগুলিকে জেতার কোনও পরিকল্পনাই নেই দলের। কিন্তু যাঁরা পার্টিটাকে এই জায়গায় এনেছে সেই ৮০% লোককে বাদ দিয়ে দেওয়া হল। এবং তাঁদের সাপোর্ট করছেন ‘ভার্চুয়াল চক্রবর্তী’ এবং ‘টুইটার মালব্য’। তাঁদের লক্ষ্য, তৃণমূলকে হারিয়ে বাংলা জয় নয়। বিজেপির অর্গানাইজেশন দখল করা।” রাজ্য সভাপতির প্রতি সুকান্ত মজুমদারের প্রতি তাঁর মন্তব্য, “সুকান্ত মজুমদার ভাল ছেলে। সে জানেই না কী কাগজ সই করছে। চাপের মধ্যে আছে।” এরপরই চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, “আপনারাও আসুন জেলা সফরে, আমরাও জেলা সফরে যাচ্ছি। দেখি ক’জনকে শোকজ করছেন। আমরাও আসল বিজেপি। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে যাচ্ছি।” এখন জয়প্রকাশের উষ্মা সামলাতে কী পদক্ষেপ নেয় পদ্ম-নেতৃত্ব, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।