ফের সারা দেশে এগিয়ে বাংলা। এবার কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে ভারতের শীর্ষে পৌঁছল বঙ্গ। বিগত ক্যালেন্ডার বর্ষে যোগীর উত্তরপ্রদেশকে টপকে শীর্ষস্থানে পৌঁছেছে মমতার বাংলা। আর সেই তথ্যই উঠে এসেছে কৃষিমন্ত্রকের রিপোর্টে। কৃষিতে সেরা ১০ রাজ্যের যে তালিকা তৈরি করেছে মন্ত্রক, তাতে সেরা বাংলাই। উত্তরপ্রদেশ-সহ ওই তালিকায় রয়েছে আরও পাঁচ বিজেপিশাসিত রাজ্য। এই তালিকার চতুর্থস্থানে রয়েছে গেরুয়াশিবিরের আরেক রাজ্য গুজরাট। ধান, তিল, তামাক আর সব্জির রেকর্ড উৎপাদনেই বাংলার মুকুটে এসেছে শীর্ষে থাকার তকমা। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাট, আলু, মাছ, সব্জি, আম, আনারস, পেয়ারা ও কমলা লেবুর মতো ফলের উৎপাদনও। সব্জির উৎপাদনে উত্তরপ্রদেশকে টপকে সেরা হয়েছে বাংলা। যে ক্যালেন্ডার বর্ষে বাংলা এই সাফল্য পেয়েছে, তার গোটাটাই ছিল প্রতিবন্ধকতা যুক্ত। একধারে যেমন যশ সহ বেশ কয়েকদফার ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুতর্যাগ, তেমনই আবার করোনার দাপট ছিল অব্যাহত। এহেন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও যে ভাবে কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে বাংলা দেশের সেরা হয়েছে, তা প্রশংসিত হয়েছে মন্ত্রকের তরফেও। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কৃষকের মানোন্নয়নে একের পর এক জনমুখী নীতি, কৃষিজমির খাজনা মুকুব, কৃষক বন্ধু’র সফল রূপায়ণ, বিনামূল্যে শস্য বিমা, কৃষক পেনশনের মতো প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার কারণেই এই সাফল্য এসেছে রাজ্যের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিএসডিপি) ২১ শতাংশ এসেছে কৃষি উৎপাদন থেকে। চলতি ক্যালেন্ডার বর্ষেও এই ধারা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত মিলেছে সাফল্যের এই খতিয়ান থেকেই। বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী। সন্তুষ্ট কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও।
উল্লেখ্য, কৃষিমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সেরা ১০ রাজ্যের কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলা, উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাব। এরপরের ক্রম অনুযায়ী রয়েছে গুজরাত, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও ছত্তিশগড়। সূত্রের খবর, এই পর্বে ১৪৬.০৫ লাখ টন চাল উৎপাদন করে দেশের শীর্ষে বাংলা। রাজ্যের প্রতি হেক্টর জমিতে ২৬০০ কিলো ধান উৎপাদিত হয়েছে। গত ২০২০ ক্যালেন্ডার বর্ষে দেশের মোট ১৫ শতাংশ সব্জি উৎপাদন করে শীর্ষস্থানে ছিল উত্তরপ্রদেশ। বিগত ক্যালেন্ডার বর্ষে (২০২১) যোগীরাজ্যের সেই তকমা কেড়ে নিয়েছে বাংলা, দেশের মোট সব্জির ১৬ শতাংশ উৎপাদন করেছে। চাল, সব্জি ছাড়াও তিল এবং তামাক উৎপাদনেও দেশের সেরা হয়েছে বাংলা। এছাড়াও এই পর্বে চা, আলু ও মাছ উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয়স্থান দখল করেছে বাংলা। বাংলার এই সাফল্য প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী শোভনদেববাবু বলেন, “রাজ্যের প্রায় ৭২ লাখ কৃষক পরিবারের জন্য জনমুখী একগুচ্ছ প্রকল্প নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কৃষক বন্ধুর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছেন তিনি। কৃষিজমির খাজনা মুকুব করে আরও বেশি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়েছেন কৃষিকাজে। দেশে বিরল প্রকল্প বিনামূল্যে শস্যবিমা, ফসল নিয়েও নিশ্চিত করেছে কৃষকদের। কৃষিমন্ত্রীর কথায়, এরই পাশাপাশি নায্যমূল্যে সার ও কৃষি সহায়ক সরঞ্জাম সরবরাহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত করেছে কৃষির সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে। মুখ্যমন্ত্রীর এহেন কৃষি স্বাথর্বাহী প্রকল্পই বাংলাকে দেশের সেরা করেছে।”