ক্রমশই বেড়ে চলেছে ঋণ। মোদী জমানায় যা আপাতত দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’বছর আগেও ঋণের হার ছিল জিডিপি বা দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থিক উৎপাদনের ৪৬.৬ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষের শেষে ২০২২ সালের ৩১ মার্চে গিয়ে তা জিডিপির ৬২ শতাংশ হবে বলেই সরকারের আনুমানিক হিসেব। সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে সোমবার এমনটাই জানাল কেন্দ্র। সম্পত্তি বিক্রির পাশাপাশি করদাতাদের থেকে পাওয়া অর্থে সহজেই এই ঋণ মেটানো যাবে বলেও লোকসভায় জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী।
বর্তমানে মোদী সরকারের এখন ঋণের বোঝা কত? কেন্দ্রের কাছে তা লিখিতভাবে জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব)। জবাব দিতে গিয়ে অবশ্য কৌশলে টাকার অঙ্কে হিসেব এড়িয়ে গিয়েছে সরকার। স্রেফ জিডিপি’র হারে জানিয়েছে ঋণের অঙ্ক। যদিও সম্প্রতি সেকেন্ডে কোয়ার্টারে মোদি সরকার যে জিডিপি’র অঙ্ক জানিয়েছে, সেই হার বজায় থাকলে চলতি অর্থবর্ষের শেষে আনুমানিক ঋণের অঙ্ক দাঁড়াবে প্রায় ২২ লক্ষ কোটি টাকা। এমনটাই অনুমান তথ্যাভিজ্ঞ মহলের। পরিসংখ্যান মন্ত্রক সেকেন্ড কোয়ার্টারের জিডিপির যে আনুমানিক হিসেব দিয়েছে, তা হল ৩৫.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা। এই হিসেবকে ভিত্তি করলে ঘরোয়া (ডোমেস্টিক) ঋণের বোঝা ২২ লক্ষ কোটি টাকার মতোই দাঁড়ায়। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চ মাসেও ঠিক একই ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন দেব। সেখানে মোদী সরকার লিখিতভাবে জানিয়েছিল, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ডোমেস্টিক বা ঘরোয়া ঋণভার জিডিপি’র ৪৬.৬ শতাংশ। অর্থাৎ সময়ান্তরে সরকারের দুই জবাবেই স্পষ্ট যে, ঋণের হার বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, সরকারের কাছে ঋণভারের জবাব তো বটেই, নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প মুদ্রা যোজনার বিষয়েও সংসদে সরকার সঠিক উত্তর দিতে না পারায় চেপে ধরেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। জবাবে আমতা-আমতা করায় নজিরবিহীনভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সমালোচনা করলেন খোদ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। সভার মধ্যেই। বাংল্য় কতজনকে মুদ্রা যোজনায় ঋণ দেওয়া হয়েছে? ব্যাঙ্ককে কত টার্গেট দেওয়া হয়েছে? কতজন ঋণ মিটিয়ে ফের এই যোজনায় ঋণ নিয়েছেন? প্রশ্নগুলি ছিল এমনই।
জবাব দিতে রীতিমতো নাজেহাল হন অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভগবত খারাড। বলেন, “পরে জেনে এসে উত্তর দেব। নয়ত, সংসদে জমা করব।” বারবার একই কথা বলতে থাকেন মন্ত্রী। যা দেখে ক্ষুব্ধ হন স্পিকার। রাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “সবই যদি জেনে এসে বলবেন, তাহলে সংসদ কীসের জন্য?” ওম বিড়লার এই সমালোচনা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেন বটে, কিন্তু তা আর সামাল দেওয়া যায়নি। সৌগতবাবু বলেন, “মন্ত্রী কোনও কিছুর জবাব না জেনেই সংসদে চলে এসেছেন। তাছাড়া এই সরকারের কাছে কোনও কিছুরই জবাব নেই। যে তথ্যই জানতে চাওয়া হোক, উত্তর আসে না।” তথ্য গোপন করাই সরকারের লক্ষ্য বলেও সংসদের বাইরে তোপ দাগেন সৌগতবাবু।