মাঝে কেটে গিয়েছে দেড়শো বছর। বদল হয়েছে অনেক কিছু। বদলায়নি পুরনো নিয়ম। আজও মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভাতশালার সান্যাল বাড়ির পুজোর রীতিতে নেই কোনও বদল। পরিবর্তে পুরনো নিয়মকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলাই যেন ওই পরিবারের দুর্গাপুজোর বিশেষত্ব।
সান্যাল বাড়ির পুজোর ইতিহাস জানতে চাইলে আপনাকে আরও দেড়শো বছর পিছিয়ে যেতে হবে ব্রিটিশ আমলে। সেই সময় সূচনা পুজোর। তখন মায়ের পুজোয় ছাগ বলি দেওয়া হত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিকারপুরের জমিদার বাড়ির পাততারি গুটিয়ে ডোমকলের ভাতশালায় উঠে আসে সান্যাল পরিবারের লোকজন।
তখন থেকেই মায়ের পুজোয় ছাগল বলি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ওই বাড়ির বর্ষীয়ান সদস্য কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী বারাসতের বাসিন্দা মাধব কুমার সান্যাল বলেন, “আমাদের বাড়ির পারিবারিক পুজোর পরতে পরতে নিয়মনিষ্ঠার প্রতিফলন।”
নেই প্রজাদের দাবি দাবাও। তার পরেও নিয়ম রক্ষায় এখনও অষ্টমীতে নরনারায়ণ ভোজ হয়। এখনও ঘটা করে কুমোরটুলির শিল্পী দিয়ে প্রতিমা নির্মাণ করা হয়। যার সূচনা করেছিলেন বাড়িরই সেজো ছেলে দমদম নাগেরবাজারের বাসিন্দা প্রয়াত চিকিৎসক সাধন কুমার সান্যাল। ওই রীতি আজও চলছে।
পুজোর শুরু থেকে বংশের কোনও সদস্য চণ্ডীপাঠ করতেন। এক সময় চণ্ডীপাঠ করতেন জমিদার সুধীরকুমার সান্যাল ঠাকুর। বর্তমানে তাঁর দাদা মণীন্দ্রকুমার সান্যালের মেয়ে বন্দনা সান্যাল ঠাকুর। প্রতি বছর পুজোয় চণ্ডীপাঠের টানেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি ভাতশালায় আসেন।
গত বছর যদিও করোনার জেরে বাড়ির পুজোয় যোগ দিতে পারেননি তিনি। সান্যাল বাড়ির পুজোয় এবার অংশ নেবেন পরিবারের তারকা কন্যা দেবস্মিতাও। সদ্যই বিনোদুনিয়ায় কাজ শুরু করেছেন তিনি। তাই এবারের দুর্গাপুজো আরও বেশি জমজমাট হবে বলেই আশা পরিবারের সদস্যদের।
সান্যাল পরিবারের সদস্যরা জানান, “সান্যাল বাড়ির পুজো শুধু পারিবারিক নয়। জমিদার আমলে প্রজাদের চাহিদা মেটাতেই এই পুজোর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তখনকার দিনে মুসলিমরাও ওই পুজোয় সহযোগিতা করতেন। তখন পুজো প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হত। হত নরনারায়ণ ভোজ। এখন জমিদারি নেই।