উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে কাজ করলেও, আদতে বাংলার বাসিন্দা। তাই এলাকা ছেড়ে বঙ্গে ফেরত যাওয়ার ‘হুমকি’ যোগী আদিত্যনাথের পুলিশের। দিনভর হেনস্থার শিকার বাংলার ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক। পরবর্তীতে দুই রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের উত্তরপ্রদেশে থাকার বিষয়টি ‘নিশ্চিত’ হয়।
উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের ‘সোনবর্ষা’ মার্কেট এলাকায় বাস করেন ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানা এলাকার বাসিন্দা। গোরক্ষপুরে কেউ ফেরি করেন, কেউবা পুরনো জিনিস বিক্রির কাজ করেন। সেখানেই একসঙ্গে ভাড়ায় থাকেন অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের শফিকুল, সুজাউদ্দিন, ইকবাল, সেলিমরা। গত শনিবার রাতে সেখানে অভিযান চালায় গোরক্ষপুর (উত্তর) জোনের চৌরিচৌরা থানার পুলিশ। বাংলা থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের পরেরদিন, রবিবার ভোরে থানায় হাজিরা দিতে বলা হয়। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। থানার আধিকারিকের কথামতো রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ চৌরিচৌরা থানায় হাজির হন প্রত্যেকে। চাওয়া হয় বৈধ পরিচয়পত্র। প্রত্যেকেই আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড দেখান পুলিস আধিকারিকদের। তারপরেও বিকেল চারটে পর্যন্ত আটক রাখা হয় তাঁদের। এক পরিযায়ী শ্রমিকের কথায়, পুলিশের তরফে তাঁদের বলা হয় গোরক্ষপুরে থাকতে পারবেন না। বাংলায় ফেরত চলে যাওয়ার নিদান দেওয়া হয়। এই পর্বেই মুখ্যমন্ত্রী যোগীর গোরক্ষপুর সফর ছিল। তাঁর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বাইরের কাউকে গোরক্ষপুরে থাকতে দেওয়া যাবে না বলে শ্রমিকদের জানায় পুলিশ।
স্থানীয় থানার তরফে এই নিদান পেয়ে বেলডাঙার লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ২৩ জন অসহায়। সেই সূত্রে দেশজুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সাদিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁদের। তিনি গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। গোরক্ষপুরের জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। জেলাশাসক তাঁকে জানান, ‘এরকম ঘটনা কাম্য নয়’। জেলাশাসকের তরফের এডিজি গোরক্ষপুর অখিল কুমার এবং অতিরিক্ত পুলিস সুপার গোরক্ষপুর (উত্তর) মনোজ কুমার অবস্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা জানান, গোটা বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ঘটনা সূত্রে, রবিবার রাতে ফের শ্রমিকদের বাড়িতে অভিযান চালায় চৌরিচৌরা থানার পুলিস।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাড়ির মালিককে কার্যত ‘হুমকি’ দিয়ে পুলিশ জানায়, বাংলা থেকে যাওয়া সংশ্লিষ্ট ২৩ জনকে আর বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না। অন্যথায় বাড়ির মালিককেও গ্রেফতার করা হবে। একইসঙ্গে, শ্রমিকদের সোমবার বিকেল চারটের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন শফিকুলরা।
পরিযায়ী শ্রমিকদের এই হেনস্তার কথা কানে যেতেই নড়েচড়ে বসেন যোগীরাজ্যের শীর্ষ পুলিসকর্তারা। তারা যোগাযোগ করেন মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিসের সঙ্গে। পরিযায়ী এই শ্রমিকদের কোনও ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে কি না, তা জানতে চান গোরক্ষপুরের (উত্তর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। মুর্শিদাবাদের পুলিস সুপার শবরী রাজকুমার এবং এসডিপিও শেখ সামসুদ্দিনের তৎপরতায় ২৩ জনের বিস্তারিত তালিকা পাঠানো হয় গোরক্ষপুরে। সেই তালিকায় দেখা যায়, কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের কোনওরকম ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। এরপরেই তাঁদের সেখানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে যোগী রাজ্যের পুলিস।