ভোটে জিতে বিধানসভার প্রধান বিরোধী দলনেতা হয়েছেন। কিন্তু তারপর থেকেই একের পর এক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে তাঁর। প্রথমে যশ এর ত্রাণের ত্রিপল চুরিতে তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন। এরপর আর্থিক প্রতারণা করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ভীষণই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি রাখাল বেরা। এ বার জেলায় দায়ের হওয়া আরও একটি প্রতারণা মামলায় রাখাল বেরাকে কাঁথি আদালতে তোলা হয়। আদালতের নির্দেশে চারদিনের পুলিশি হেফাজতে রাখাল। এই ঘটনায় ফের একবার মুখ পুড়লো শুভেন্দুর।
গত ৬ জুন চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে রাখালকে গ্রেফতার করেছিল মানিকতলা থানার পুলিশ। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাখালের বিরুদ্ধে মানিকতলা থানায় অভিযোগ করেন সুজিত দাস নামে অশোকনগরের এক বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, ২০১৯ সালে সেচ ও পরিবহন দফতরে গ্রুপ ‘ডি’ পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নেন রাখাল। মানিকতলা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ এসেছে রাখাল ও সেচ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী চঞ্চল নন্দীর বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি, সেই চাকরী প্রার্থী মিজানুর আলী খাঁন কাঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী এর আগে পরিবহন দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী থাকাকালীন সেখানে চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ চঞ্চল নন্দী ও রাখাল বেরা। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে পরিবহন দফতরে কনডাক্টরের চাকরি করে দেবে বলে ১০ লক্ষ টাকা চায় দুজন। ওই মাসেই স্ত্রী ও মায়ের গয়না বন্ধক রেখে ও বাবার ব্যবসায় গচ্ছিত ৬ লক্ষ টাকা কাঁথি পৌরসভা অফিসে শুভেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ চঞ্চল নন্দীর হাতে তুলে দিই৷ দুজনই জানান বাকি টাকা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেলে তারপরেই নেওয়া হবে।”
এরপর প্রতারিত মিজানুরের আরও অভিযোগ, ‘‘পুজোর সময় চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়ে যাব বলে জানানো হয়৷ কিন্তু গত বছর নভেম্বরে শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রীপদ থেকে ইস্তফা দেন। তখনও ওঁরা বলেছিলেন, ভোটের পর শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী হলে ভাল চাকরি দেওয়া হবে। পরে, টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে রাখাল ও চঞ্চল টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। বাধ্য হয়ে সুবিচার পাবার আশায় কাঁথি থানার পুলিশের দ্বারস্থ হই৷’’
উল্লেখ্য, জেলায় কান পাতলেই শোনা যায়, রাখাল ও চঞ্চল উভয়েই শুভেন্দুর ‘অত্যন্ত কাছের লোক’। আর্থিক প্রতারণা কাণ্ডে তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ হোয়াটস্যাপে কথোপকথন ও অন্যান্য প্রমাণ হাতে পায়। সেই ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় রাখাল বেরাকে। একদা শুভেন্দুর ব্যক্তিগত সচিব হয়েও কাজ করেছিলেন রাখাল। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের বড় পদকর্তাও হয়েছিলেন তিনি। নারদকাণ্ডে শুভেন্দুর ভূমিকা জানতে সিবিআইয়ের জেরার মুখেও পড়েন রাখাল।