গত ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে দেশজুড়ে সামাজিক মাধ্যম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তার পর থেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা ভারতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। পাশাপাশি এক জিবি ডেটার খরচ অনেকটাই সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার ফলে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এই বিষয়ে লোকনীতি সিএসডিএস দেশজুড়ে গবেষণা চালিয়েছে। নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব থেকে দৈনন্দিন জীবনে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার এমনকী নতুন আইটি নীতি নিয়ে সমীক্ষা চালায় সংস্থা। উল্লেখ্য, সম্প্রতি হোয়াটস্যাপ কেন্দ্রীয় সরকারকে কোর্ট অবধি টেনে নিয়ে গিয়েছিল। তাদের দাবি, নতুন আইটি নীতিতে তাদের গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষা ব্যহত হবে। এই হোয়াটস্যাপই ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। ৩৪% মানুষ এর সপক্ষে ভোট করেছেন। ফেসবুক ব্যবহার করেন ৩২% মানুষ। এর পরেই আছে ইউটিউব, ব্যবহার করেন ৩১% মানুষ। ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেন ১৫% মানুষ। আর সবচেয়ে কম জনপ্রিয় টুইটার। ব্যবহার করেন ১২% মানুষ।
প্রসঙ্গত, আরও অনেক কিছুতেই পিছিয়ে আছে টুইটার। ৮৫% হোয়াটস্যাপ ব্যবহারকারী, ৮১% ইউটিউব ব্যবহারকারী, ৭২% ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ৬০% ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী বলেছেন তারা রোজ ব্যবহার করেন এই প্ল্যাটফর্মগুলি। সেখানে টুইটারের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা ৪২%-এরও কম। ২০১৪ থেকে ২০১৮-র মধ্যে প্ল্যাটফর্মগুলির সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কিন্তু তারপর সেই জনপ্রিয়তা উল্টো পথে গেছে। যেমন, ২০১৪ সালে ফেসবুক ও টুইটারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে যথাক্রমে ৯% ও ২%। ২০১৭- তে ২০% এবং ৫%। ২০১৮- তে ৩২% এবং ১৪%। কিন্তু ২০১৮-র মে মাস থেকে ২০১৯ অবধি ফেসবুকের জনপ্রিয়তায় কোনও বৃদ্ধি হয়নি। বরং টুইটারের জনপ্রিয়তা কমেছে। হোয়াটস্যাপের ক্ষেত্রেও এই সময়ে জনপ্রিয়তায় কোন তারতম্য ঘটেনি।
২০১৯ থেকে যদিও সামাজিক মাধ্যমে বৃদ্ধি আবার চোখে পড়ছে। যে পাঁচ রাজ্যে সম্প্রতি নির্বাচন হয়ে গেল, (বাংলা, অসম, কেরল, তামিলনাড়ু এবং বিহার) তারা এই বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই রাজ্যগুলিতে শেষ দুবছরে হোয়াটস্যাপ ব্যবহাকারীর সংখ্যা ৩১% থেকে বেড়ে ৪১% হয়েছে। ইউটিউব ২৮ থেকে ৩৮, ফেসবুক ৩১- ৩৭, ইনস্টাগ্রাম ১৩ থেকে বেড়ে ২১ এবং টুইটার ১২ থেকে বেড়ে ১৭% হয়েছে। টুইটার ব্যবহারকারীরাও অনেক বেশি করে দৈনন্দিন প্ল্যাটফর্মটিকে ব্যবহার করেছেন। ২০১৯ (৯%) এর তুলনায় এখন (১৪%) অনেক বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারী এই পাঁচটি প্ল্যাটফর্মই ব্যবহার করছেন। যারা কোন প্ল্যাটফর্মই ব্যবহার করতেন না, সেই সংখ্যাটাও ৬৫% থেকে কমে ৫৫% হয়েছে। এই মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যম নিয়ে সরকারের যে কোনওরকম কড়াকড়িই এই সামাজিক গোষ্ঠীগুলির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও ২০১৯-এর পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রান্তিক শ্রেণী যেমন, মুসলিম, দলিত, আদিবাসী ব্যবহারকারীর সংখ্যাবৃদ্ধি অনেক বেশি করে গণতন্ত্রিকীরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে ধারণা।