২০০-র বেশি আসন জিতে বাংলা দখলের খোয়াব দেখেছিল তারা। কিন্তু বাস্তবে তিন সংখ্যাই ছুঁতে পারেনি গেরুয়া শিবির। একুশের রায়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাদের। এমন ফলের কারণ খুঁজতে রবিবার নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছিলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে যাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনে এগিয়ে থাকলেও মাত্র দু’টিতে জয় পেয়েছে পদ্মশিবির। বাবুল লিখেছিলেন, ‘এই হার থেকে শিক্ষা নিয়েই আগামী দিনে জিতব আমরা। উই শ্যাল উইন বিকজ অব দিস লস।রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারার পর, বার্সেলোনার তৎকালীন কোচ প্রবাদপ্রতিম জোহান ক্রুয়েফ বলেছিলেন এই লাইনটি। ব্যর্থতা থেকে অর্জন করা অভিজ্ঞতা অমূল্য।’ পাশাপাশি হারের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তবে রবিবারের এই পোস্ট নিয়েই ফেসবুকে বিজেপি কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বাবুল। নেতাদের ভূমিকা নিয়ে অনেক অভিযোগও জমা হয়েছে মন্তব্যে। অনেক ক্ষেত্রেই সে সব মেনে নিয়েছেন বাবুল।
কেন আশানুরূপ ফল হল না বিজেপির? এমন প্রশ্ন গেরুয়া শিবিরে চলছেই। তারই মধ্যে বিজেপি ছেড়ে নেতা, কর্মীদের তৃণমূলে যাওয়ার ধারাও অব্যাহত। রবিবারই বাবুলের ‘গড়’ আসানসোলে বিজেপিতে বড় ভাঙন ধরিয়েছে তৃণমূল। গেরুয়াশিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন এক সময় বিজেপির আসানসোলের জেলা সম্পাদক পদে থাকা মদনমোহন চৌবে। রবিবার আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের হাত থেকে ঘাসফুলের পতাকা নিয়েছেন আরও অনেকেই। যদিও তার আগেই ফেসবুকে দলবদলুদের নিয়ে সরব হন বাবুল। ওই পোস্টে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দাবি করেছেন, গণনার দিনে দলের কর্মীদের অনভিজ্ঞতাই হারের বড় কারণ। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘মূলত ভোটগণনা কেন্দ্রগুলিতেই বিজেপি পরাস্ত হয়েছে। আমাদের নতুন এবং অনভিজ্ঞ ছেলেরা ‘অভিজ্ঞতা’-র কাছে হেরেছে।’
বাবুলের এই পোস্টে শয়ে শয়ে মানুষ মন্তব্য করেছেন। যেমন মনোরঞ্জন জোতদার নাম একজন লিখেছেন, ‘কোনও দল নিরাপত্তা দিতে পারে না। কিন্তু সহানুভূতি নিয়ে পাশে দাঁড়ানো যায়। নির্যাতিত, নিহত, আহতদের পাশে না দাঁড়ানোয় যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তাতে দু’কোটির অ্যাকাউন্টে ভাঁটা পড়তে সময় লাগবে না…নেতৃত্ব অত্যাচারিতদের পাশে দাঁড়ায়নি। কিছু নেতার ফোন বন্ধ ছিল।’ এর জবাবে বাবুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখেছেন, তিনি করোনাজনিত কারণে ঘরবন্দী থাকলেও ভোটের ফল ঘোষণার পরে দিল্লী চলে যাননি। দীর্ঘ অসুস্থতার কথা জানালেও বাবুল লিখেছেন তিনি কোনও অজুহাত দিতে চান না। আবার আর একটি মন্তব্যে কৌস্তভ ঘোষ লিখেছেন, ‘বোলপুরের প্রার্থী অনির্বাণবাবু দিল্লী থেকে শ্রীনগর ঘুরছেন। বোলপুরে আসার সময় নেই, ও দিকে তারকেশ্বরের প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্তকে দেখুন ভোটের পর থেকে দিল্লীতে। কর্মীদের পাশে নেই…’ এমন অস্বস্তিকর প্রশ্নের জবাবে বাবুলও রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে লিখেছেন, ‘সব জানি। আমার পোস্টগুলো দেখুন। শরীর খুব খারাপ ছিল তবু নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’
শাসক শিবিরের কটাক্ষও এসেছে ফেসবুকে। একজন যেমন লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় বাবুলবাবু, আপনি লিখেছেন যে, পুলিশ প্রশাসন ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে জয়েন করাচ্ছে। তা দাদা ভোটের আগে নিশ্চয় সিবিআই, ইডির ভয় দেখিয়ে আপনারা জয়েন করিয়েছিলেন! আর আপনাদের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দুবাবুর ভোটের আগের কথাটা একটু মনে করিয়ে দিই। ‘শুধু দু’তারিখটা আসতে দিন। দেখবেন দুপুর ২টোর পর সব পঞ্চায়েত পদত্যাগ করে আমাদের হয়ে গিয়েছে।’ দাদা এই কথাটার মানে একটু বুঝিয়ে বলে দেবেন। আর ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোটটা আপনাদের মনের মতো করিয়ে হেরে গিয়ে এখন বলছেন এজেন্টরা দুর্বল ছিল। মানে যে এজেন্টরা, কর্মীরা রাতদিন আপনাদের জন্য লড়াই করলে তাঁদের লড়াইটা দুর্বল করে দিলেন! বাহ্। আচ্ছা দাদা, ভোটের আগে মেরে দেব, কেটে দেব, দেখে নেব এই কথাগুলো তো আপনাদের দিলীপদা, রাজুদা, সায়ন্তনদা, রাহুলদা বলেছিলেন সব মিটিং-এ আর শুভেন্দুদা তো দাঙ্গাটা লাগাতে বাকি রেখেছিলেন। তাই বলি, এই সব না করে সংগঠন করুন আন্দোলন করুন তবেই দেখবেন যদি কিছু হয়। জনগণ থেকে কর্মী কেউ ভরসা রাখছে না আপনাদের ওপরে।’