ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছে দোষারোপের পালা। প্রকাশ্যে কলহে জড়িয়ে পড়ছেন দলের নেতারা। সামনে চলে আসছে তাঁদের মতানৈক্যের কথা। এরই মধ্যে জন বার্লা, সৌমিত্র খাঁদের বাংলা ভাগের প্রস্তাব ঘিরে নতুন করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দলে। ঘরোয়া আলোচনায় অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। এই আবহে ঝড় উঠতে পারে রাজ্য বিজেপির কার্যকারিণী বৈঠকে। মনে করা হচ্ছে, আসন্ন রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকে নেতৃত্বের একটা বড় অংশের ক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা ও বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে। বাংলা ভাগের দাবি তোলাটা যে দলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে এবং প্রতিপক্ষদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে, এমনটাই মনে করছে রাজ্য বিজেপির বড় অংশ। কাজেই ২৯ জুনের বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সামনেই এই দুই সাংসদের মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিতে পারেন একাধিক নেতা। এমনটাই দলের অন্দরের খবর।
প্রসঙ্গত, বাংলা ভাগ করে আলাদা রাজ্যের দাবি করেছেন বিজেপির দুই সাংসদ। প্রথমে জন বার্লা দাবি করেছিলেন উত্তরবঙ্গ ভাগ করে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হোক। এরপর সাংসদ সৌমিত্র খাঁ দাবি করেন জঙ্গলমহল ভাগের। এর পরই এটা নিয়ে রাজনৈতিক জলঘোলা শুরু হয়। বিজেপির কড়া সমালোচনা করে তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস। রাজ্যবাসীও এই বঙ্গ ভাগের বিষয়টি ভালভাবে নিচ্ছে না বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। এরই মধ্যে আবার এটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়েও উঠেছে ‘ট্রোল’-এর ঝড়। বিজেপি সাংসদদের এই দাবি হাস্যাস্পদ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। এরপরই রাজ্য নেতৃত্ব মঙ্গলবার সতর্ক করে দুই সাংসদকে। নাড্ডা তলব করেন সৌমিত্র খাঁকেও। সেখানে তাকে এই ধরনের মন্তব্য নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে খবর।
বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, আরও আগে তাঁদের সতর্ক করা উচিত ছিল। ভোটে বিপর্যয়ের পর রাজ্য বিজেপিতে যখন টালমাটাল অবস্থা, তখন এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে প্রতিপক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে। চাপের মুখে পিছু হঠে সৌমিত্র ও বার্লা এটা তাঁদের ব্যক্তিগত মত বললেও, দলের পক্ষে যে তার নেতিবাচক প্রভাবই পড়েছে এমনটাই মনে করছে রাজ্য বিজেপির বড় অংশই। তাদের কথায়, বিজেপি বিভাজন চাইছে। এটাই প্রচার করতে সুবিধা হচ্ছে তৃণমূলের। রাজ্য নেতাদের একাংশের দাবি, এই ভাবে রাজ্যের নানা প্রান্তে পৃথক রাজ্যের দাবি উঠতে থাকলে বিজেপি বাংলার মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ও বাঙালির স্বার্থরক্ষার কথা বলেই শেষ পর্যন্ত বাজিমাৎ করেছেন। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরিষ্কারভাবে বিবৃতি দিক যে এরকম বাংলা ভাগের দাবিকে বিজেপি সমর্থন করে না। দিল্লী থেকে সেই বিবৃতি দেওয়া হোক। না হলে এই দাবি আবার উঠবে।