উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চান বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। গত শনিবার সাংবাদিকদের এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। আর তারপর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। তবে বার্লা যাই বলুন না কেন, আর বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ তাঁকে যতই সমর্থ করুন, তাঁদের এই দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতৃত্ব। বাংলা ভাগের কোনও রকম চক্রান্ত মেনে নেবেন না বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
কেউ বলছেন, এটা বার্লার পাবলিসিটি স্টান্ট। আবার কেউ বলছেন কেন্দ্রীয় সরকারে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রকে কিছু রদবদল হতে পারে। এই খবর জানতে পেরে তিনি লাইমলাইটে বা প্রচারের আলোয় থাকতে এই ধরণের বিতর্কিত বিষয়কে সামনে তুলে আনছে। আবার অনেকে এর পিছনে বিজেপির প্রত্যক্ষ মদত দেখতে পাচ্ছেন। তাঁদের মতে ভোটে হেরে গিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে উত্তরবঙ্গ দখল করে আলাদা রাজ্য তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীত্ব পেতে চায় বিজেপি। সব মিলিয়ে বার্লা এবং বিজেপির যাঁরা তাঁকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের সভার বিরুদ্ধে ফুঁসছে তৃণমূল। প্রয়োজনে প্রতিটি বিজেপি বিধায়ক, সাংসদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
উত্তরের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ বলেন, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলা ভাগ আমরা রুখবো। বিজেপির এই দাবির কোনও সারবত্তা নেই। তারা দুটো আসন বেশি পেয়ে উত্তরবঙ্গে ভাবছেন আলাদা রাজ্য করে মুখ্যমন্ত্রীত্ব অর্জন করবেন। কিন্তু এভাবে তা হয় না। তাঁর দাবি, ক্ষমতা থাকলে সবাই পদত্যাগ করুন। নতুন করে ভোট হোক শুধুমাত্র আলাদা রাজ্যের ইস্যুতে। তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে কারা আলাদা রাজ্যের পক্ষে, কারা আলাদা রাজ্যের বিরুদ্ধে। বিজেপি শূন্য হয়ে যাবে, এই মুহূর্তে তা হলফ করে বলতে পারি। আবার প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা কোচবিহারের অন্যতম শীর্ষ নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দাবি করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের মত উত্তরবঙ্গে পিছনের দরজা দিয়ে দখল করতে বিজেপি এই ধরনের প্রস্তাব তুলছে।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের চা বাগান শ্রমিক আন্দোলন থেকে উঠে আসা উত্তরবঙ্গের আইএনটিটিইউসি কো-অর্ডিনেটর অলক চক্রবর্তী বলেন, জন বার্লা বরাবরই ক্ষমতা এবং ফোকাসে থাকতে পছন্দ করে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারে অনগ্রসর শ্রেণি এবং তপশিলি উপজাতি ও জাতি মন্ত্রকে কিছু মন্ত্রিত্বে রদবদল হতে পারে বলে খবর আছে। সম্ভবত সেই খবর পেয়েই গরম বক্তব্য রেখে তপশিলি উপজাতি থেকে মন্ত্রিত্ব পেতে চান তিনি। এ কারণেই আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে। এর ফলে যদি কোনও রকম আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে কিংবা এর ভিতর যদি বিজেপি কোনও রকম পদক্ষেপ করার চেষ্টা করে তাহলে প্রতিটি বিজেপি নেতা বিধায়ক সাংসদের বাড়ির সামনে ধরণা বিক্ষোভ শুরু হয়ে যাবে।
আবার, আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, সাংসদ জন বার্লার এই বক্তব্য উত্তরবঙ্গের মানুষ প্রত্যাখান করেছে। সাংসদের বাংলা ভাগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে তৃণমূল পথে নামবে। সৌরভ এ-ও জানান, সাংসদের বাংলা ভাগের চক্রান্তকে তারই দলের জেলা সভাপতি মেনে নিতে পারেনি। তাই তিনি তৃণমূলে যোগদান করেছেন। সৌরভ বলেন, আলিপুরদুয়ারের মানুষ তৈরি হয়ে আছেন তিনি জেলায় ঢুকলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত ধরের কথায়, রাজ্যের মানুষের কাছে আমাদের লজ্জা যে আমাদের সাংসদ বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মদতেই সাংসদ পাগলের প্রলাপ বকছেন। নির্বাচনে রাজ্যের ক্ষমতা না পেয়ে বিজেপি এখন এই সব চক্রান্ত করছে।