ভোটের আগে আশার আলো দেখালেও ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, স্বাধীনতার পর এই প্রথম বার বাংলার বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস শূন্য আর সংযুক্ত মোর্চার শিবরাত্রির সলতে জ্বালিয়ে রেখেছেন একমাত্র ভাঙড় থেকে জেতা আইএসএফ প্রার্থী নৌসাদ সিদ্দিকি। এদিকে সেই ভাঙড়েই নাকি শত শত সিপিএম ও আইএসএফ কর্মী ঘরছাড়া। অভিযোগ, বিধায়ক অফিস খোলার বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন না। বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে মোর্চা কর্মীদের বাড়ি, উঠছে এমন অভিযোগও।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির মুখপত্র গণশক্তি পত্রিকায় বৃহস্পতিবার ফলাও করে খবর ছাপা হয়েছে। কিন্তু বাম কর্মীরা তোপ দাগছেন নেতাদের দিকে। ফেসবুক ছেয়ে গিয়েছে সেই ধরণের পোস্টে। কেন এখনও কোনও নেতা ভাঙড়ে পৌঁছতে পারছেন না? কী করছেন সূর্য মিশ্র, বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমদের মতো প্রথম সারির নেতারা? সিপিএমের সক্রিয় কর্মীরা গুগলে সার্চ করে দেখছেন দলের মূল দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে সড়ক পথে ভাঙড়ের দূরত্ব কত? সেই কিলোমিটার পোস্ট করে পরোক্ষে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই তোপ দাগছেন সাধারণ কর্মীরা।
সিপিএমকে কটাক্ষ করতে বিরোধীরা অনেক সময়েই বিদ্রুপ করে বলে, ওরা নিকারাগুয়াকে নন্দীগ্রামের চেয়ে কাছের মনে করে, কলকাতার আগে ভাবে কিউবার কথা! এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ লিখেছেন, ভিয়েতনাম নিয়ে সর্বদা যাঁদের হৃদয় কাঁপে, তাঁরা ভাঙড় নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কেন? কোথায় সেই প্রতিবাদ? রাজ্য নেতারা কি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন?
ভোটের বিপর্যয়ের জেরে এই ‘হাঁসজারু’ প্রকারের মোর্চা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, এসব লোক দেখানো মোর্চা। বাংলার মানুষ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। সেই ‘বাবল’ মোর্চার আত্মপ্রকাশ হয়েছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। সেদিনই অধীর চৌধুরী-আব্বাস সিদ্দিকি সংঘাত দেখেছিল ব্রিগেডের মহামঞ্চ। পর্যবেক্ষকদের মতে, শুরুতেই তাল কেটেছিল মোর্চার। তারপর ফুরফুরার পীরজাদাকে নিয়ে কংগ্রেসের অসন্তোষ, ধর্মগুরু থেকে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে বস্তুবাদী সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমের ‘কোলাকুলি’ নিয়ে কম চর্চা হয়নি।
ভাঙড়ে সিপিএম নেতাদের না পৌঁছনো নিয়ে অনেক নেতাই মুখ খুলতে চাননি। তবে কর্মীদের ক্ষোভ নিয়ে কিছু না বললেও সিপিএমের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেন, “জেলা প্রশাসনকে সমস্তটা জানানো হয়েছে। আমরা বসে নেই। সমস্ত রকম চেষ্টা চলছে।” যদিও গত বুধবার বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে সন্ত্রাসের কোনও কথা বলেননি। তার মানে কি তাঁরা মানছেন যে, কোনো সন্ত্রাস হয়নি? পুরোটাই মিথ্যে রটনা মমতা সরকারকে অপদস্থ করার জন্য?