দেশে তখন সদ্য আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দৈনিক সংক্রমণ। চারিদিকে অক্সিজেন, হাসপাতালের বেডের জন্য হাহাকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে বারবারই জমায়েতে রাশ টানার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ঠিক সেই পরিস্থিতিতেই সংক্রমণের হার একধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দেয় উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত। মেলা চত্বরের পাশাপাশি হুহু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে গোটা হরিদ্বারেই। আর তারপরই বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা কুম্ভমেলাকে সুপার স্প্রেডার আখ্যা দেয়। এবার ফের বিতর্কে সেই কুম্ভমেলা। মেলা ঘিরে উঠল মারাত্মক বেনিয়মের অভিযোগ। সূত্রের খবর, কুম্ভমেলায় সাধু-সন্তদের করোনা পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা একটি বেসরকারি ল্যাব টার্গেট পূরণ করতে একের পর এক মারাত্মক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কুম্ভমেলায় কোভিড প্রোটোকল সংক্রান্ত একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু করেছিল হরিদ্বার জেলা প্রশাসন। তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আসতেই চোখ কপালে উঠছে তাঁদের। যাতে দেখা যাচ্ছে মেগা ইভেন্টে করোনা পরীক্ষার টার্গেট পূরণ করতে একাধিক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে তাঁরা। যা রীতিমতো বিপজ্জনক। তদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই বেসরকারি ল্যাবটি কুম্ভমেলায় অন্তত ১ লক্ষ ভুয়ো করোনা রিপোর্ট পেশ করেছে। এই করোনা রিপোর্টগুলি দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের নামে। যারা হয়তো কুম্ভমেলাতে অংশগ্রহণও করেনি। শুধু তাই নয়, ওই বেসরকারি সংস্থা নাকি একটি মাত্র কিট থেকে ৭০০ জনের করোনা পরীক্ষা করেছে বলে দেখানো হয়েছে।
আবার স্যাম্পল সংগ্রহের জন্য যে ২০০ জনের নাম দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যকর্মী নন। তাঁরা হয় ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, নাহয় পড়ুয়া। এদের মধ্যে অনেকে আবার রাজস্থানের বাসিন্দা। এখানেই শেষ নয়। বেনিয়মের আরও বাকি আছে। জানা গিয়েছে, ওই সংস্থাটি নাকি একই মোবাইল নম্বর দিয়ে ৫০ জন পর্যন্ত মানুষের নাম রেজিস্টার করিয়েছে। উল্লেখ্য, হরিদ্বার কুম্ভমেলা নিয়ে এমনিতেই দেশজুড়ে বিতর্ক। বিরোধীরা তো বটেই বিদেশি বহু সংস্থাও এই বড়সড় ধর্মীয় জমায়েতকেই ভারতে কোভিড ছড়ানোর এবং নতুন কোভিড স্ট্রেন উৎপন্ন হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরেছে। এমনকী হু-ও নাম না করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য এই বিপুল জনসমাবেশকে বিঁধেছে। আর সেখানেই এবার কোভিড প্রোটোকল সংক্রান্ত মারাত্মক সব অনিয়মের অভিযোগ উঠল। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের ভূমিকা।