আদানি গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থায় মোট ৪৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের তিনটি ফান্ড ফ্রিজ করে দিয়েছে ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি। ফলত সোমবার আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যায় পাঁচ থেকে ১৮ শতাংশ। আদানির যে কোম্পানিগুলির দাম সবচেয়ে কমেছে, তার মধ্যে আছে আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পোর্টস এবং স্পেশাল ইকনমিক জোন। প্রতিটি সংস্থার শেয়ারের দাম কমেছে ১৫ শতাংশ। কয়েকজন পর্যবেক্ষক আগেই বলেছিলেন, যেভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আদানির কোম্পানিগুলিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে চলেছেন, তার পরিণতি ভাল নাও হতে পারে। গত ১০ই জুন ব্লুমবার্গ ইনটেলিজেন্সের অ্যানালিস্ট গৌরব পাটানকর এবং নীতিন ছান্দুকা লেখেন, “কয়েকটি মরিশাসের কোম্পানি আদানির বেশিরভাগ শেয়ার কিনেছে। বিদেশের কয়েকটি সংস্থার হাতে আদানির এত শেয়ার জমা হওয়ায় দেশীয় বিনিয়োগকারীরা ওই কোম্পানিকে এড়িয়ে চলছেন।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরে শিল্পপতি গৌতম আদানি পরিচালিত কোম্পানিগুলির শেয়ারের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তার ফলে অতিমহামারীর মধ্যেও আদানির সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ে ৪৩০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। এশিয়ার দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তি হয়ে ওঠেন ওই শিল্পপতি। তাঁর মোট সম্পত্তির মূল্য দাঁড়ায় ৭৬৭০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ৫ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০২১ সালে আদানির কোম্পানি টোটাল গ্যাস লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৩০ শতাংশ। আদানি ট্রান্সমিশন লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৬৩ শতাংশ। আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৩৫ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, মার্কিন শিল্পপতি ওয়ারেন বাফেট বা এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির সম্পত্তিও চলতি বছরে এত বাড়েনি। মূলত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আদানির কোম্পানিগুলির শেয়ারের বড় অংশ কিনে নিয়েছেন। আদানি গ্রুপের খুব কম শেয়ারই দেশীয় বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এরকম পরিস্থিতিতে শেয়ারের দাম দ্রুত ওঠাপড়া করে। ব্লুমবার্গ ইনটেলিজেনসিয়া অ্যানালিস্টরা লিখেছেন, ২০০ দিনে আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলির শেয়ারের দাম বেড়েছে গড়ে দেড়শ থেকে ২০০ শতাংশ। ওই সময় টেসলার শেয়ারের দাম বেড়েছে ১২৬ শতাংশ।
আদানির মতো শিল্পপতির সম্পত্তি বাড়লেও সামগ্রিকভাবে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় সংকটে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ঘরোয়া অর্থনীতি ৭.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক (-) ৭.৩ শতাংশ। গত আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ঘরোয়া অর্থনীতির সংকোচন হয়েছিল ২৪ শতাংশ। পরের ত্রৈমাসিকে তা কমে হয় ৭.৫ শতাংশ। এত খারাপের মধ্যেই ইতিবাচক যে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি হয়েছে ১.৬ শতাংশ হারে। গত চার দশকে এত খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ভারতীয় অর্থনীতিতে।