২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি৷ আর তার ঠিক সাড়ে তিন বছরের মাথায় ফের পুরনো ঘরেই ফিরছেন মুকুল রায়৷ বিজেপির হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জয় পাওয়ার পরেও গেরুয়া শিবির ত্যাগ করছেন তিনি৷ শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল নারদার মতো মামলায় নাম জড়িত থাকায় হয়তো বিজেপি ত্যাগ করা সহজ হবে না মুকুলের৷ যদিও পোড়খাওয়া রাজনীতিক মুকুল সেই সমস্ত অঙ্ককে নস্যাৎ করে দিয়ে রাজনীতিতে নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছেন৷
কিন্তু প্রশ্ন হল, বিজেপিতে সর্বভারতীয় সহ সভাপতির মতো পদ পেয়েও কেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন মুকুল? এর নেপথ্য বড় কারণ যে রাজ্য বিজেপির অন্দরের গোষ্ঠী কোন্দল, তা আর অজানা নয়৷ কারণ দলে যোগ দেওয়া ইস্তক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বনিবনা হয়নি মুকুলের। দলের অন্দরে দিলীপের গোষ্ঠীর সঙ্গে মুকুল অনুগামীদের কার্যত আড়াআড়ি বিভাজনের ঘটনা বারবারই সামনে এসেছে৷
রাজ্যে দলের সংগঠনকে শক্তিশালী এবং তৃণমূলে ঘরে ফাটল ধরাতেই মুকুলকে দলে টেনেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা৷ কারণ বঙ্গ রাজনীতিতে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা অতুলনীয়৷ মুকুলের হাত ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূলের নিচু স্তরের নেতারাও বিজেপিতে নাম লেখাতে শুরু করেছিলেন৷ ২০১৯-এক লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি ১৯টি আসন পাওয়ার পর স্বভাবতই বিজেপিতে মুকুলের গুরুত্ব আরও বাড়ে৷ আর একই সঙ্গে আরও প্রকট হয় বিজেপির আদি-নব্য দ্বন্দ্ব৷
কারণ ২০১৯ সালের পর থেকে যত বিধানসভা নির্বাচন এগিয়েছে, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ যাঁদের অধিকাংশই আসেন মুকুলের হাত ধরে৷ এই আবহে মুকুল এবং তাঁর অনুগামীদের আশা ছিল, ২০১৯-এ বিজেপিকে সাফল্য এনে দেওয়ার পর ২০২১-এর আগে তাঁর গুরুত্ব আরও বাড়বে ৷ কিন্তু বিধানসভার ভোট যত এগিয়েছে, দেখা গিয়েছে ততই যেন বিজেপিতে মুকুলের সক্রিয়তা কমেছে৷
সাংগঠিনক দক্ষতার জন্য খ্যাত মুকুলকে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী করে বিজেপি৷ যা মুকুল বা তাঁর অনুগামীদের খুব একটা পছন্দ ছিল না৷ বিজেপি যেখানে রাজ্যে ২০০ আসন পেয়ে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছিল, সেখানে মুকুলের মতো পোড়খাওয়া নেতাকে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না, তা নিয়ে মুকুল শিবিরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে৷ এমনকী দিল্লীতে দরবার করেও মুকুল এই সমস্যার সুরাহা করতে পারেননি বলেই তাঁর অনুগামীদের দাবি৷ ভোটে প্রার্থী করে মুকুলকে কার্যত নিজের কেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
এদিকে, নির্বাচনে মুকুল জিতলেও বিজেপির ফল আশানুরূপ হয়নি৷ যার ফলে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলও বাড়তে থাকে৷ পাশাপাশি মুকুলের ক্ষোভও৷ অন্যদিকে, এরই মধ্যে তৃণমূল শিবির থেকেও বার্তা আসতে থাকে মুকুলের কাছে৷ এই পরিস্থিতিতে পরিষদীয় রাজনীতির বদলে সংগঠন নিয়ে কাজ করতে চাওয়া মুকুল যে পুরনো দলকেই বেছে নেবেন, তা বলাই বাহুল্য৷ দিল্লীর নেতারা হয়তো মুকুলকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, কিন্তু রাজ্য স্তরে অভিজ্ঞ এই নেতা প্রাপ্য সম্মান পাননি বলেই অভিযোগ তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের৷
এখানেই শেষ নয়। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানও মুকুলের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অন্যতম কারণ হতে পারে৷ কারণ তৃণমূলে থাকতেই দুই নেতার সম্পর্ক খুব একটা ভাল ছিল না৷ মুকুল অনুগামীদের আরও দাবি, খাতায় কলমে তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হলেও কার্যক্ষেত্রে এই পদ অনেকটাই আলঙ্কারিক৷ তাই বিজেপিতে তিতিবিরক্ত হয়েই মুকুল ফের তৃণমূলের পথে পা বাড়ালেন বলে মনে করা হচ্ছে৷