আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মতো বুধবার সকালেই উড়িষ্যার বালাসোরে আছড়ে পড়েছিল ‘যশ’। তারপর ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শেষ করে সময় যত এগিয়েছে, ততই শক্তি হারিয়েছে এই অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। অবশেষে বুধবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণিঝড় থেকে আবার গভীর নিম্নচাপে বদলে গেছে। ঝড়ের গতি ও হাওয়ার বেগ দুই কমেছে। তবে ঝাঁঝ কমেনি। উড়িষ্যার উত্তর উপকূল পেরিয়ে যশের অবস্থান এখন দক্ষিণ ঝাড়খণ্ডে। তবে এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার বাংলার পশ্চিমের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতায় সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আজ সারাদিনই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে কলকাতায়।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বুধবার কলকাতায় ঝোড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। দিঘাতে ছিল ৮৮ কিলোমিটার। ল্যান্ডফলের পরদিন ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারালেও ঝোড়ো হাওয়ার রেশ থেকে যাবে। কলকাতায় আজ ৬৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে, সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার (গাস্টিং)। দিনভর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। জলমগ্ন হতে পারে কলকতা। বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর না মিললেও, গতকাল ঝড়ের দাপটে শহরের ইতিউতি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে, উপড়েছে খুঁটি। ঝড়ের ভয়ে গতকাল কলকাতার আটটি উড়ালপুলে যান চলাচল বন্ধের নির্দেশিকা দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সকাল থেকেই বন্ধ ছিল মা উড়ালপুল, তারাতলা, গার্ডেনরিচ, পার্কস্ট্রিট, উল্টোডাঙা, চিংড়িঘাটা, গড়িয়াহাট এবং এজেসি বোস রোড উড়ালপুল। পরে সেগুলি খুলে দেওয়া হয়। নবান্ন এবং উপান্নে আগে থেকেই খোলা হয়েছে দু’টি কন্ট্রোল রুম। সেখান থেকে রাতভর পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে।
গাঙ্গেয় উপকূল থেকে ঘূর্ণিঝড় বিদায় নিলেও এর রেশ থাকতে পারে বলেই মনে করছেন আবহবিদরা। বৃহস্পতিবার পশ্চিমের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হতে পারে ঝাড়গ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায়। ভারী বৃষ্টি হবে নদিয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমে। এই জেলাগুলিতে কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে। মুর্শিদাবাদ, মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও অতি ভারীর বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। দার্জিলিং, দিনাজপুর, কালিম্পং, জলপাইগুড়িতে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। এই পরিস্থিতিতে ঝড়বৃষ্টিতে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেলে ছেঁড়া তারে হাত দিতে বার বার বারণ করছে সিইএসসি। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে থাকলে বা তার ছেঁড়া দেখলে সেটি ছুঁতে নিষেধ করা হয়েছে। অনেক সময় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে জলের মধ্যে পড়ে থাকে। সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনও এলাকায় বিপজ্জনকভাবে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে থাকতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিতে বলা হয়েছে। তার জন্য হেল্পলাইন নম্বরও দিয়েছে সিইএসসি—৩৫০১ ১৯১২/ ৪৪০৩ ১৯১২/ ১৮৬০ ৫০০ ১৯১২/ ১৯১২।