যশ আসছে। আর তার অপেক্ষায় দুরু দুরু বক্ষে প্রহর গুণছে কলকাতা। আবারও কী ফিরবে উম্পুনের সেই স্মৃতি। হাজার হাজার গাছ শিকড় সমেত উপড়ে পড়া, ডাল ভেঙে পড়া, টানা ৩-৪ দিন থেকে এক সপ্তাহ না জল না বিদ্যুৎ, সঙ্গে বেশ কিছু প্রাণহানি! এই ছবিই কী ফিরছে ফের কলকাতার বুকে যশের হাত ধরে। এটাই এখান কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার মানুষদের মূল জিজ্ঞাস্য। তবে সেই আশঙ্কা অনেকটাই নির্মূল করেছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছেন, যশের হাত ধরে কলকাতায় উম্পনের ছবি ফিরবে না। তার সব থেকে বড় কারন উম্পুন যশের থেকেও শক্তিশালী ঝড় ছিল আর তা কলকাতার ওপর দিয়ে সরাসরি বয়ে গিয়েছিল। তুলনায় যশ কলকাতাকে পাশ কাটিয়েই যাচ্ছে। তাই তার ভয়াবহতা মহানগরের বুকে সেভাবে পড়বে না। কলকাতা ৯০-৯৫কিমি বেগে কালবৈশাখী ঝড় দেখেছে। এবারেও সেটাই হবে। তাই উম্পুনের সঙ্গে কোনওভাবেই যশের তুলনা টানা উচিত হবে না। তার ক্ষয়ক্ষতিও উম্পুনের মতো হবে না কলকাতার বুকে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, উম্পুন তৈরি হয়েছিল শ্রীলঙ্কার পাশে ভারত মহাসাগরে। সেখান থেকে সে দেড় হাজার কিমি পথ পাড়ি দিয়ে আছড়ে পড়েছিল বাংলায়। সেই ঝড় প্রথম থেকেই ছিল উত্তরপূর্ব মুখী। স্থলভূমিতে প্রবেশ করেও সে পূর্ব দিকেই বাঁক নিয়েছিল। দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, নদীয়া ছুঁয়ে তা বাংলাদেশে চলে গিয়েছিল। তাই উম্পুনে এই জেলাগুলিই সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিল। আর দীর্ঘ পথপাড়ি দেওয়ার কারনে সাগরে শক্তি বাড়াবার প্রচুর সুযোগ পেয়েছিল উম্পুন। কিন্তু যশ স্থলভূমি থেকে মাত্র ৭০০কিমি দূরে জন্ম নিয়েছে। তাই উম্পুনের মতো শক্তি সে সাগর থেকে সঞ্চয় করার সময় পাবে না। উম্পুনের গতি সাগরের বুকেই একসময় ঘন্টায় ২৬০কিমি অবধি উঠেছিল। সেই গতি স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ১মিনিট। যশ কিন্তু ততটা শক্তি পাচ্ছে না। আর তার গতিপথ কলকাতা থেকে বেশ দূরেই থাকছে। বাংলার দক্ষিন পশ্চিম এলাকা ঘেঁষে উড়িষ্যার ওপর দিয়ে সে চলে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডে। তারপর মধ্য ভারতে গিয়ে বিলীন হবে সে। কলকাতার ওপর দিয়ে যশ যেহেতু বয়ে যাবে না তাই কলকাতাবাসীও উম্পুনের মতো ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন না।
এখনও পর্যন্ত যশের যা মতিগতি দেখা যাচ্ছে তাতে, যশ স্থলভূমির কাছাকাছি এসে গেলেই কলকাতায় দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে দেবে। মঙ্গলবার রাত থেকেই সেই ছবি ধরা পড়বে। এরপর সময় যতই গড়াবে ততই হাওয়ার বেগ বাড়বে। সঙ্গে বৃষ্টি। এদিন দুপুর থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে যা বুধবার রাত পর্যন্ত চলবে। অতি ভারী থেকে প্রবল বৃষ্টি হবে কলকাতায়। সেই সঙ্গে যশ স্থলভূমিতে পা রাখলেই কলকাতায় ঘন্টায় ৯০কিমি বেগে ঝড় বইবে। মাঝে মধ্যে তা ১০০কিমি বেগও ছুঁয়ে ফেলতে পারে। এর জেরে গাছ উপড়ে পড়বে, বিদ্যুতের তার ছিঁড়বে, প্রচুর জল জমবে। কিন্তু এর বেশি কিছু হবে না। আর এই ক্ষয়ক্ষতি সারাতে ২-১দিনের বেশি সময় না লাগারই কথা। যশের সময় অনেক কিছুরই প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু এবার সিইএসসি, কিংবা পুরনিগম, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সবাই কোমর বেঁধে যশের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। তাই ঝড় চলে যাওয়ার পরে পরেই কাজ শুরু হয়ে যাবে কলকাতার বুকে। আমজনতাকে তাই খুব বেশি ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে না বলেই আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন।