দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা আইনি পথে গোয়েন্দা প্রধান নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করায় এবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিবিআই) প্রধান হওয়ার দৌড় থেকে বাতিল হয়ে গেলেন মোদী সরকারের ‘পছন্দের’ বলে পরিচিত দুই প্রার্থী রাকেশ আস্থানা এবং যোগেশচন্দ্র মোদী। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ওই দুই প্রার্থীকে নিয়ে একাধিক বিতর্ক থেকেছে। যদিও স্রেফ আইনি প্রতিবন্ধকতার জন্যই ওই দু’জন এই মুহূর্তে সিবিআই প্রধান হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি রামানা।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে নিয়ে গঠিত বিশেষ নির্বাচন কমিটি আপাতত পরবর্তী সিবিআই প্রধান নিয়োগের দায়ভার সামলাচ্ছে। সেই নিয়ে সোমবার দীর্ঘ ৯০ মিনিট বৈঠক হয়। সেখানেই আস্থানা এবং যোগেশের নিয়োগে আপত্তি তোলেন প্রধান বিচারপতি। শীর্ষ আদালতের একটি রায়ের উল্লেখ করে তিনি জানান, চাকরির মেয়াদ ছ’মাস বাকি থাকতে কোনও সরকারি আমলাকে পুলিশ প্রধানের ধরনের দায়িত্বে বসানো আইনবিরোধী।
আপাতত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রধান হিসেবে কর্মরত আস্থানা। আগামী ৩১ অগস্ট ওই পদ থেকে অবসর নেওয়ার কথা তাঁর। অন্য দিকে, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র প্রধান প্রধান যোগেশ। তাঁর অবসর আগামী ৩১ মে। আইন অনুযায়ী তাঁদের নিয়োগের বিরুদ্ধে মত দেন অধীরও। এর ফলে তিন সদস্যের নিয়োগ কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত আস্থানা এবং যোগেশের বিরুদ্ধে যায়। ফলে পরবর্তী সিবিআই প্রধান হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে যান দু’জনই।
উল্লেখ্য, সরকারি আমলা হিসেবে আস্থানা এবং যোগেশ দু’জনেই একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন। সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা থাকাকালীন তৎকালীন সিবিআই প্রধান অলোক বর্মার সঙ্গে বিরোধ বাধে আস্থানার। আস্থানার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন বর্মা। পাল্টা বর্মার বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনেন আস্থানা। সেই নিয়ে তরজা চরমে পৌঁছলে বর্মাকে অপসারণ করে কেন্দ্র। পরবর্তী কালে আস্থানাকে বিএসএফ প্রধান করা হয়। সেইসময় বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাফাল দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে উদ্যত হওয়াতেই বর্মাকে সরানো হল। ‘সরকার-ঘনিষ্ঠ’ হওয়ায় আস্থানাকে দায়িত্ব দেওয়া হল অন্যত্র।
একই রকম ভাবে বিতর্কিত আমলা হিসেবে পরিচিত ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার তদন্তের দায়িত্বে থাকা যোগেশ। গুজরাত দাঙ্গায় মোদীকে ক্লিনচিট দিয়েছিলেন তিনি। গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হরেন পাণ্ড্য খুনের মামলার দায়িত্বেও ছিলেন যোগেশ। গুজরাত দাঙ্গার তদন্তে মোদীর বিরুদ্ধে বয়ান দিয়েছিলেন পাণ্ড্য। জানিয়েছিলেন, দাঙ্গার আগে নিজের বাসভবনে আমলা এবং পুলিশদের ডেকে মোদী হিন্দুদের রাগ মেটানোর সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে খুন হয়েছিলেন হরেন। যোগেশের বিরুদ্ধে সেই খুনের তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও তুলেছিলেন হরেনের পরিবার।