সোমবার স্পিকারের অনুমতি ছাড়াই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী। অভিযোগ নারদ কাণ্ডে জড়িত ছিলেন তাঁরা। সোমবার ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছাড়াও তৃণমূল নেতা মদন মিত্রকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। পাশাপাশি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে এদিন সকালে। ঘটনাটি নিয়ে সরব রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহল।
চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন জানালেন, “দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল একটা অসম্ভব প্রতিহিংসামূলক পন্থা নিয়ে এই বিজেপি সরকার চেষ্টা করছে যাঁরা সর্বতভাবে প্রতিবাদী তাঁদের কণ্ঠরোধ করতে। দিল্লিতে কেউ পোস্টার ছাপিয়েছে, আমাদের টিকা দিন। সেজন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে। এক গুজরাতি কবি গঙ্গায় ভেসে আসা মৃতদেহ দেখে উলঙ্গ রাজার ভাবনায় এক কবিতা লিখেছেন বলে তাঁকে অত্যাচারিত হতে হচ্ছে, তাঁর চরিত্রহনন হচ্ছে। আচমকা এই ধরনের ঘটনা কেন? আগেই অনেকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে পার্টি ফান্ডে টাকা দিতে আসেন অনেকেই। সেই রকমই একজন এসেছিলেন। ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক ট্রানজাকশনও দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকেই জনমত নিয়ে বিজয়ী। তাছাড়া বিধানসভার অনুমতি ছাড়া বিধায়কদের গ্রেফতার করা যায় না। সেই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। পদ্মপাল হিসেবেই কাজ করছেন রাজ্যপাল। পদ্মপাল হিসেবেই অনুমতি দিয়েছেন এই কাজে। এটা করা যায় না। এখনও যদি সাধারণ মানুষ কেন্দ্র থেকে ওই নক্কারজনক দলকে সরাতে না পারে তাহলে ভারতের ভবিষ্যত বড় অন্ধকার।”
ইতিহাসবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মতে, “স্বৈরাচার চলছে দেশে। বিপুল জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে BJP। তাঁরা জানেন না এই কাজের জেরে ৭৫টাও শূন্য হয়ে যাবে। ভোটে হেরে BJP এই ধরনের কাজ করছে। রাজ্যপালকে এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন তো আইন, প্রশাসন সবকিছুকেই স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।” সরব হয়েছেন শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারও। বর্তমান রাজনৈতিক জগতে যে কাণ্ডটি ঘটেছে, এটি নিতান্তই রাজনৈতিক কৌশল। লক্ষ্য করছি, রাজ্যে এবং কেন্দ্রে দুটি দলের মধ্যে লাভালাভের হিসেব কষাকষি চলছে। যার মূল লক্ষ্য ক্ষমতা ধরে রাখা। সেই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ আজকের ঘটনা। দুর্নীতির সঙ্গে যদি এই নেতৃত্বরা সত্যিই যুক্ত থাকেন, তাহলে অবশ্যই ফয়সালা চাইব। তাঁদের শাস্তি চাইব। তখন এই গ্রেফতারি মান্যতা পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হল নতুন সরকার গঠনের সময় যখন মন্ত্রী এবং নেতারা নিজেদের দায়িত্ব নিতে শুরু করেছেন, তখন সিবিআই তৎপর হল কেন? এর আগে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। আবার এই সময়টাকে বাছা হল কেন? আমি মনে করি এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি। খুবই দুঃখজনক। কারণ, সিবিআই কোনও রাজনৈতিক দলের অধীনে থেকে কাজ করতে পারে না।” জানিয়েছেন মীরাতুন।
নাট্যব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা কৌশিক সেন বলেছেন, “আমার মনে হয় আইনই শেষ কথা বলবে। কিন্তু যে সময় মন্ত্রী এবং নেতাদের গ্রেফতার করা হল সেটা ভাবাচ্ছে। এই সময়ের আগে ও পরে যে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে, সেটার কথা মাথায় রাখলে একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রশ্ন উঠে আসছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। শোভন চট্টোপাধ্যায় যদি বিজেপিতে থেকে যেতেন তাহলে তাঁর নাম আদৌ থাকত? কিংবা মুকুল রায় বা শুভেন্দু অধিকারীর নাম কেন নেই, এই ধরনের প্রশ্ন উঠবেই। আমাদের দেশে তো আদালত রয়েছে, সেখানে সুবিচার হবে বলেই আমার মত। কিন্তু রাজ্যপাল থেকে শুরু করে বিজেপির সব নেতারা একটা নতুন তৈরি হওয়া সরকারের পিছনে যেভাবে লেগে পড়েছে, এই করোনা মহামারীর সময়, সেটা সকলেই দেখতে পাচ্ছে। সুতরাং শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের প্রতিটি মানুষই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়েই প্রশ্ন তুলবেন। এই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।”
আরেক সুপরিচিত নাট্যব্যক্তিত্ব ও তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষের মতে, “এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঘটনা। বাংলায় প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ কেন্দ্রের অন্যান্য মন্ত্রীশান্ত্রীরা বার বার আসার পরেও, বাংলার মানুষের ভোট পেলেন না। বিজেপি তো বরাবরই প্রতিহিংসাপরায়ণ দল। তাঁদের প্রতিহিংসার ইতিহাসটা পরিষ্কার। যদি ন্যায়সঙ্গত গ্রেফতারি হতো, তাহলে কিছু মানুষ বাদ গেলেন কেন? যদি লোকসভার ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতি লাগে, বিধানসভায় রাজ্যপালের অনুমতি নেওয়া হল কেন? বিধানসভার স্পিকারকে জানানো হল না কেন? কী ধরণের আইন চলছে দেশে?”