মাত্র দু’মাস আগের ঘটনা। যখন পড়শি রাজ্য মহারাষ্ট্র করোনায় একেবারে জেরবার, সেইসময় এই মারণ ভাইরাসকে প্রায় বাগে এনে ফেলেছিল গোয়া সরকার। সংক্রমণশূন্য ছিল না বটে। কিন্তু দিনে মেরেকেটে ৫০ থেকে ৭৫ জন নাগরিক কোভিডে আক্রান্ত হতেন। পজিটিভিটি রেট ছিল ৫ শতাংশের মধ্যে। তখন সুস্থতার হারও ছিল ৯৭ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করত। আর সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মোটামুটি ৭০০ জন।
ঠিক তারপরই দ্রুত ছবিটা পাল্টাতে থাকল। পর পর দু’ধরনের বদল। একদিকে ঝাঁ চকচকে ক্যাসিনো, বিলাসবহুল রিসর্ট, গ্রীষ্মের রোদেলা বিচে উপচে পড়ল দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড়। ছিল না সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই। ছিল না মাস্ক মুখে দেওয়ার তাগিদ। আর সেই সুবাদে চোখের আড়ালে হু হু করে ছড়াতে থাকল সংক্রমণ। প্রতিদিন চড়চড় করে বাড়তে থাকল আক্রান্তের সংখ্যা। চড়তে থাকল মৃত্যুর পারদ।
ঠিক দু’মাসের ব্যবধান। গোটা ছবি এখন বদলে গেছে। স্বাস্থ্য দফতর বলছে, রাজ্যে এখন দিনে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ৫ থেকে বেড়ে পজিটভিটি রেট ৫১ শতাংশের এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করছে। ৪ থেকে ১০ মে-এর মধ্যে মারা গেছেন ৩৮৯ জন মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর হার সেখানে নয়া রেকর্ড গড়েছে। একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৫ জন৷ তার উপর মাথাচাড়া দিচ্ছে অক্সিজেনের ঘাটতি। গোয়া মেডিক্যাল কলেজেই গতকাল দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। সবই অক্সিজেন না পেয়ে।
এই পরিস্থিতিতে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, সময় থাকতে সরকারের কঠোর হওয়া উচিত ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও দেশ-বিদেশের পর্যটকরা অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধির পরোয়াও করেননি তাঁরা। অন্যদিকে সরকার কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে জেনেও হাত গুটিয়ে ছিল। নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানো, হাসপাতালের শয্যাবৃদ্ধি- দু’মাস ধরে কিছুই হয়নি৷ যার জেরে ভুগছে সাধারণ মানুষ।
এখন বিপদ বুঝে একের পর নির্দেশিকা জারি করছে সরকার। প্রথমে ২১ এপ্রিল থেকে নাইট কার্ফু, তারপর সপ্তাহান্তিক লকডাউন এবং শেষমেশ গত ৯মে থেকে পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রমোদ সাওয়ান্তের সরকার। কিন্তু পজিটিভিটি রেট কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না। যাকে নিশানা করেই কংগ্রেস বিধায়ক অ্যালেক্স রেগিলান্ড বলেন, “প্রশাসন তো বটেই, তার পাশাপাশি হোটেল এবং রিসর্টগুলি গোয়ার এই অবস্থার জন্য দায়ী৷”