পাশ-ফেল নয়, সকাল থেকেই তিনি দৌড়চ্ছেন নম্বর বাড়ানোর লক্ষ্যে। ইএম বাইপাসের গা লাগোয়া বুথ থেকে, খালপোলের ঘিঞ্জি গলি হয়ে ফুলবাগানের আধুনিকতা। সব ছুঁয়ে দেখলেন। মাঝে অবশ্য পরিচিতি ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সামনে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে রোগী কেমন আছে তা জেনে নিয়েছেন। ভোটের দিন এভাবেই চরকির মতো পাক খাচ্ছেন বেলেঘাটার তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পাল।
২০১৯ লোকসভা ভোটের প্রাপ্ত ফলের হিসেবে বেলেঘাটা আসনে এগিয়ে আছে জোড়া ফুল। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। শুধু দ্বিতীয় স্থানে থাকা নয়, পিছিয়ে আছেন প্রথম স্থানাধিকারীর থেকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটে। ফলে প্রথম থেকেই এই আসন জেতা নিয়ে সংশয় নেই তৃণমূলের মধ্যে। তবুও রাজপথ থেকে এঁদো গলি। হাইরাইজ থেকে মধ্যবিত্তের দো’তলা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা মাসিমা ভোট দিয়েছেন কিনা তা খোঁজ নিয়ে চলেছেন পরেশ পাল।
১৯৭৭ থেকে ২০০৬ অবধি লাগাতার এই আসনে জয় ছিনিয়ে এনেছে বামেরা। কলকাতার এই আসনকে দীর্ঘদিন এমনকি ২০১১ সালের পরেও বলা হত বামেদের দূর্গ। ২০১১ সালে এখানে জয় ছিনিয়ে আনেন পরেশ পাল। ২০১৬ সালে পুনরায় জয়ী হন তিনি। আর গত দু’বারের ভোটে এখানে দ্বিতীয় হয়ে আছে সেই বামেরাই। তবে এ দিনের লড়াইয়ে মূল প্রতিপক্ষ গেরুয়া শিবির বলে মত পরেশ পালের৷ ২০১১ সালে পরেশ পাল হারিয়ে দেন বামেদের হেভিওয়েট প্রার্থী অনাদি সাহুকে। পরেশ পাল পেয়েছিলেন প্রায় ৫৮ শতাংশ ভোট৷ বামেরা পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ১.৫ শতাংশ ভোট। ২০১৬ সালে পরেশ পালের ভোট কমে ৫ শতাংশ। পান ৫৩ শতাংশ ভোট। বামেদের ভোট কমে ১ শতাংশ। পায় ৩৭ শতাংশ ভোট। বিজেপির ভোট বাড়ে সাড়ে ছয় শতাংশ। বিজেপি পায় ৮ শতাংশ ভোট।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়ে যায় আরও অনেকটা। কারণ বামেদের ভোট যায় বিজেপির দিকে। যদিও সকাল থেকেই পরেশ পাল বলছেন ফারাক আরও বাড়িয়ে দেবেন তিনি। সারা বছর নানা মুডে দেখা যায় তাঁকে। মাঝে মধ্যেই মাথা গরম করে ফেলার মতো সুনামও রয়েছে। তবে সুভাষ মেলা হোক বা পরেশ পালের ইলিশ উৎসব, জনসংযোগের অভিনবত্বে পরেশ পালের জুড়ি মেলা ভার। তাই সকাল থেকে ঘোরাঘুরির পরে পরেশ পালের একটাই লাইন, “সারা বছর যে পড়ে, সে কখনও পরীক্ষার দিন পরীক্ষা নিয়ে ভাবেন না। ভাবে তার নম্বর নিয়ে। মার্জিন কতটা বাড়িয়ে নিতে পারি, সেটাই এখন দেখে নিচ্ছি’।