করোনার সেকেন্ড ওয়েভে বর্তমানে গোটা দেশ কার্যত দিশেহারা। স্রেফ অক্সিজেনের অভাবে একের পর এক হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর খবর আসছে। হাসপাতালে বেড নেই। শ্মশানে মৃতদেহের সারি। সৎকার করাও সম্ভব হচ্ছে না ঠিকমতো। এমনই এক দুর্যোগের সময় এগিয়ে এসেছেন ওঁরা। সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের। রমজান মাসে রোজা রাখছেন সকলেই। তবে বিচার করছেন না মৃতদেহ হিন্দু না মুসলিমের। মৃত যে ধর্মের, সেই ধর্মের রীতি মেনেই দাহকার্য বা কবরস্থ করছেন। পাশাপাশি মানছেন করোনাবিধিও। রীতিমতো পিপিই কিট পরে তাঁরা করোনায় মৃতদের দেহ সৎকার করছেন।
২২ জনের এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ৩৩ বছরের ইমদাদ ইমান। পেশায় ছোট ব্যবসায়ী এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার ইমদাদ থাকেন পুরনো লখনউয়ের মকবারা গোলগঞ্জ এলাকায়। এখনও পর্যন্ত তাঁরা করোনায় মৃত মুসলিম সম্প্রদায়ের ২২ জনকে কবর দিয়েছেন। একইসাথে দাহ করেছেন সাতজন হিন্দুর মৃতদেহ। মূলত, পরিবারের সদস্যরা সৎকার সম্পন্ন করার মতো পরিস্থিতিতে না থাকলে বা অন্যত্র থাকলে এগিয়ে আসছেন ইমদাদরা। পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নিয়ে যথাযথভাবে সৎকার করছেন মৃতদেহের।
তবে এবারই প্রথম নয়, গত বছরও তাঁরা এমন কাজ করেছেন। ইমদাদ বলেছেন, “গত ২১ এপ্রিল একটি ফোন আসে। ভারতনগরের সীতাপুরের বাসিন্দা এক মহিলার করোনায় মৃত্যুর কথা জানান তাঁরই এক প্রতিবেশী। মহিলা একাই থাকতেন। মৃত্যুর পর তিন দিন বাড়িতেই পড়ে ছিল দেহ। প্রতিবেশীরা সাহস পাচ্ছিলেন না। আমরা গিয়ে ওই মহিলার শেষকৃত্য সম্পন্ন করি।”
তারপর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই নানা জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছেন ইমদাদরা। দিন দুয়েক আগে, তাঁদের এক সদস্য ৪০০ কিলোমিটার দূরে এলাহাবাদে (অধুনা, প্রয়াগরাজ) গিয়ে এক হিন্দু ব্যক্তির দাহকাজ সম্পন্ন করেছেন। ইমদাদ বলেছেন, “আমাদের এক সদস্য সিরাজের বন্ধুর মৃত্যু হয় করোনায়। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা ভাইরাসের ভয় পাচ্ছিলেন। সিরাজ প্রয়াগরাজ গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই বন্ধুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে।”