ভোট আবহে ফের বড়সড় বিপাকে পড়ল গেরুয়াশিবির। বিজেপি নেতার অপহরণের সাজানো চিত্রনাট্য হাতেনাতে ধরল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় নির্বাচনের আগে মুখ পুড়ল গেরুয়াশিবিরের। এখন নির্বাচনের আগে বিতর্ক সামাল দিতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে সিউড়ির বিজেপি নেতাদের।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাত্রে পারুই থানার বনশঙ্কা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিজেপি নেতা ঘনশ্যাম মাহারাকে পুরন্দরপুরের কাছে একটি পেট্রলপাম্প থেকে তেল ভরে ফেরার সময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে অপহৃত হয়েছে, এই মর্মে পুলিশে অভিযোগ জানায় বিজেপি নেতৃত্ব। নির্বাচনের আগে অপহৃত বিজেপি নেতাকে খুঁজে বের করার দাবিতে সরব হয় তারা। এর জন্য মঙ্গলবার রাতেই সিউড়িতে পুলিস সুপারের অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভও করে। পুলিশ তদন্তের আশ্বাস দিলে রাতেই বিক্ষোভ তুলে নেয় বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু বুধবার সকালে ফের আন্দোলনে নামে। পুলিশ সিউড়ি তিলপাড়া ব্যারেজে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালায় নিখোঁজ বিজেপি নেতার খোজে। কিন্তু তাতেও ফল না মেলায় বুধবার দুপুরে সিউড়িতে তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। অবশেষে বুধবার রাত্রে পারুইয়ের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি নীলমাধব মণ্ডলের হেফাজত থেকে অপহৃত বিজেপি নেতা ঘনশ্যাম মাহারাকে উদ্ধার করে পুলিশ। ফাঁস হয় সাজানো চিত্রনাট্য।
এই ঘটনায় বিজেপির তরফে বারংবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এমনকী বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি সরজিত ঘোষের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগও দায়ের করে বিজেপি। তৃণমূলের দাবি, গত ১৮ই এপ্রিল এই সরজিত ঘোষের বাড়িতে ব্যাপক বোমাবাজি করে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনায় এদিনের অপহৃত বিজেপি নেতা ঘনশ্যাম মাহারার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ঘনশ্যামের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ লঘু করার জন্যই এই অপহরণের চিত্রনাট্য সাজিয়েছিল বিজেপি, এমনটাই দাবি তৃণমূলের। এই ঘটনায় ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে পুলিশ মহলেও। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টিকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এবার বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিজেপির অন্দরেও। সিউড়ি শহরে বিজেপির এই কাণ্ড নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আর এই সমালোচনা বিজেপি প্রার্থীকে আগামী নির্বাচনে চরম দুর্ভোগে ফেলতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বৃহস্পতিবার বিজেপির চিত্রনাট্য ফাঁস হওয়ার পর সিউড়ি-২ নং ব্লকের তৃণমূল ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম এক সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “বিজেপি এই অপহরণের চিত্রনাট্য সাজিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছিল তা আজ ফাঁস করল পুলিশ। আমরা এই ঘটনায় কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কোনওভাবেই যুক্ত নয়। চক্রান্ত করে তৃণমূলকে বদনাম করার চেষ্টা চলছিল।” যদিও গোটা ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে বিজেপি নেতৃত্ব।