আজ, রবিবার ছুটির দিনে দুপুর সোয়া বারোটা নাগাদ থেমে গিয়েছে টানা ৪০দিনের যুদ্ধ। খবর প্রকাশ্যে আসতেই বাঙালিকে ঘিরে ধরেছে বিষণ্ণতা। কিন্তু এই চরম সত্যকে মেনে নিতেই হবে। শেষ বিদায়ও জানাতে হবে। বাঙালিও তাই অপুকে শেষ বিদায় জানাতে বুক বেঁধেছে শক্ত করে। শেষ সন্ধ্যায় জনস্রোতে ভেসে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নায়কোচিত বিদায় নিলেন অভিনেতা, নাট্যকার, আবৃত্তিকার, চিত্রকর, লেখক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুট দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে শেষ বিদায় জানালো রাজ্য সরকার। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী বোস, সাংসদ-অভিনেতা দেব, পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, সাংসদ মালা রায় সহ অসংখ্য সৌমিত্র অনুরাগী।
এদিন বেলভিউ হাসপাতালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ নিঃশ্বাসের খবর আসতেই সেখানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রথমে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর গলফ গ্রীনের বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে টেকনিশিয়ান স্টুডিও হয়ে রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়া হবে দেহ। আমজনতা যাতে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন তার জন্য সেখানে দেহ কিছুক্ষন রাখা হবে। তারপর তাঁর দেহ পদযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। গান স্যালুটের পরই সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতোই এদিন গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নিজের বাসভবন, টেকনিশিয়ান স্টুডিও ঘুরে বিকাল ৩টে ৩০ মিনিট নাগাদ এই কিংবদন্তি অভিনেতার দেহ নিয়ে আসা হয় রবীন্দ্রসদনে। প্রিয় অপুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এখানেই ভিড় জমান আমজনতা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখানেই অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সৌমিত্রকে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্ররাও। বিকাল ৫টার কিছু পরে সেখানে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
এরপরে সাড়ে ৫টা নাগাদ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ যাত্রা শুরু হয় রবীন্দ্রসদন থেকে। পদযাত্রায় অংশ নেন আজারো জনতা। সেও পদযাত্রায় সামিল হব মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, নেতা থেকে মন্ত্রী, সাংসদ থেকে বিধায়কেরা। পথে জনতার ভিড়ে বার বার থমকেছে সেই যাত্রা। সকলেই চেয়েছেন ফেলুদাকে, অপুকে শেষবারের মতো একবার দেখতে, একটুকু ছুঁতে। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ দেহ পৌঁছায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সেখানেই রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হয় অভিনেতাকে গান স্যালুট। এরপর সেখানেই সন্ধ্যা ৭টার কিছু পরেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বাঙালির এই কিংবদন্তী অভিনেতার। শেষ হয় বাংলা শিল্পজগতের একটি অধ্যায়।