বরাবর তিনি প্রান্তিক শ্রেণির প্রতিনিধি। যেই কারণে বহুবার তাঁকে বহু অন্যায় সইতে হয়েছে। ৭০’র দশকে জড়িয়ে পড়েছিলেন নকশাল আন্দোলনেও। তবে সে সব পার করে পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সাহিত্য জগতের একজন স্বনামধন্য লেখক। কিন্তু অর্থ উপার্জনের জন্য এখনও পরিশ্রম করে চলেন রোজ, রাঁধুনি হিসেবে কাজ করেন হেলেন কেলার বধির বিদ্যালয়ে।
তিনি মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ৭০ বছরের এই লেখক সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জানিয়েছিলেন, এই বয়সে এতটা পরিশ্রমের কাজ আর পেরে উঠছেন না তিনি। অন্য কোনও কাজ যদি পাওয়া যেত, তাহলে সুবিধা হতো। সেই চিঠি পেয়েই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিদ্যানগর জেলা গ্রন্থাগারে মনোরঞ্জনবাবুকে নিয়োগ করা হল আজ। এই খবর পেয়ে মমতার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী।
সাহিত্যিক মনোরঞ্জনের জীবন কাহিনি আদতেই কোনও উপন্যাসের চেয়ে কম নয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে এখানে চলে এসে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন রিফিউজি ক্যাম্প ও কলোনিতে। এরপর মাত্র ১৪ বছর বয়সে রোজগারের তাগিদে গিয়ে পৌঁছেছিলেন মধ্যভারতের দন্ডকারণ্যে। সেখানেই মোড় ঘুরে গেছিল জীবনের। নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন সক্রিয় ভাবে। কলকাতা ফিরে ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। জেলে যান। কারাবাস করার সময়েই পড়াশোনা শেখেন মনোরঞ্জন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কলকাতা শহরে শুরু করেন রিক্সা চালাতে।
এই রিক্সা চালানোর সূত্রেই সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর সংস্পর্শে পৌঁছন তিনি। আবারও একবার ঘুরে যায় জীবনের মোড়। মহাশ্বেতা দেবীর অনুপ্রেরণায় তিনি লিখে ফেলেন একটি বই, ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন’। প্রকাশ পেতেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বইটি। বাংলা অ্যাকাডেমি তাঁকে পুরস্কৃতও করে। এর পরে কলম থামেনি আর। সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের কথা ফুটে উঠতে থাকে পাতায় পাতায়। দলিতদের যন্ত্রণা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু এত লড়াই করে ৭০ বছরের মনোরঞ্জন ব্যাপারী আর রাঁধুনির কাজ করতে পারছিলেন না বলে জানা গেছে। সে কারণেই আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।