ভারতে করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর টেস্ট, অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট, সব পদ্ধতিই ভাল কাজ করছে। তবে এবার এক্স-রে প্লেট দেখেই বলে দেওয়া যাবে রোগী কোভিড পজিটিভ কিনা। কোভিড টেস্টিং পদ্ধতিতে এক্স-রে প্লেটের ব্যবহার আগেও হয়েছে। তবে এর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স জুড়ে দিয়ে আরও উন্নত গবেষণার পথে শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি)।
চেস্ট এক্স-রে বিশ্লেষণ করতে অভিজ্ঞ ডাক্তারের চোখ যেমন দরকার, তেমনি চটজলদি রিপোর্ট দেখে সংক্রমণের হদিশ দিতে উন্নত প্রযুক্তিরও প্রয়োজন। সেই কাজ করে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কম্পিউটারের মস্তিষ্কে যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ভরে দেওয়া হয় তাহলে দুয়ে মিলে কাজ হবে অনেক সহজ। পরীক্ষা পদ্ধতি হবে নির্ভুল, সময়ও কম লাগবে। করোনা পরীক্ষার এই বিশেষ পদ্ধতি নিয়েই কাজ করছেন আইআইইএসটি-র ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর অঙ্কিতা প্রামাণিকের টিম। তিনিই এই গবেষণার প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর। তাঁর সঙ্গে এই গবেষণার কাজে রয়েছেন ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই ছাত্র জ্যোতিষ্ক দাস এবং শুভদীপ ঘোষ।
আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডক্টর অঙ্কিতার টিম তৈরি করেছে এমন একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন যার দ্বারা কোভিড টেস্টিং পদ্ধতি হবে অনেকটাই সহজ। অধ্যাপক বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে একটা অ্যালগোরিদম তৈরি হয়েছে। এই অ্যালগোরিদম কম্পিউটারে ইনস্টল করা যায়। এর কাজ হল চেস্ট এক্স-রে দেখে কোভিড সংক্রমণ রয়েছে কিনা সেটা ধরে দেওয়া। অঙ্কিতাদেবী বলেছেন, এক্স-রে সাদা-কালো প্লেট নয়, ডিজিটাল এক্স রে ইমেজ কম্পিউটারে আপলোড করেই কাজ হবে। করোনা সংক্রমণ রয়েছে কিনা জানতে আগে রোগীর ডিজিটাল এক্স-রে করানো হবে। সেই ইমেজ এই অ্যালগোরিদমে ফেললেই এক সেকেন্ডের মধ্যে কম্পিউটার বলে দেবে রোগী কোভিড পজিটিভ না কোভিড নেগেটিভ।
তবে সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে বা ফুসফুসের অবস্থা কেমন, সেটা জানতে হলে প্রযুক্তিতে আরও বদল আনতে হবে। এখনও সেই পর্যায়ে গবেষণা পৌঁছয়নি বলেই জানিয়েছেন অধ্যাপক। এই অ্যালগোরিদমের বিষয়ে এখনই সবিস্তারে জানাতে চাননি তিনি। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে সাফল্য এলেই এই বিষয়ে বিশদে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ডক্টর অঙ্কিতা। এই রিসার্চ টিমের সদস্য জ্যোতিষ্ক বলেছেন, ‘এই ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে অনেকদিন ধরেই কাজ হচ্ছিল। এক্স-রে প্লেট দেখে আমাদের টিমের ডিজাইন করা এই অ্যালগোরিদম সেকেন্ডের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করতে পারবে।’ জ্যোতিষ্কর কথায়, এখনও অবধি যতটা পরীক্ষা হয়েছে তাতে অনেকটাই সাফল্য এসেছে। তবে আরও বেশি ক্লিনিকাল টেস্ট করার পরেই বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে।
কীভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, সে বিষয়ে ডক্টর অঙ্কিতা বলেছেন, আইআইইএসটি-র এই গবেষণায় রয়েছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের নোডাল অফিসার (কোভিড) ডাক্তার কৌশিক চৌধুরী এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তার অরুণাংশু তালুকদার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি এই কম্পিউটার অ্যালগোরিদম বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘প্র্যাকটিকাল ক্লিনিকাল ডায়াগোনসিস এখনও করা হয়নি। ওয়ার্ল্ড ডেটা বা বিশ্বে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চেস্ট এক্স রে ইমেজ এই অ্যালগোরিদমে বিশ্লেষণ করে নির্ভুল ডেটা পাওয়া গেছে। তবে বাস্তবে এক্স-রে রিপোর্টের ফল কেমন আসে সেটাই এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
তবে গোটা ব্যাপারটাই এখন গবেষণার স্তরে থাকায় এই টেস্টিং পদ্ধতি কতটা সঠিক ডেটা দেবে, তা এখনই জোর দিয়ে বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন ডক্টর অঙ্কিতা। তাঁর মতে, রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর টেস্টে কোভিড সংক্রমণ নির্ভুলভাবে ধরা যায়। শুধু সময় লাগে অনেক বেশি। আরটি-পিসিআরে আরএনএ ভাইরাসকে চিহ্নিত করা যায়। সেক্ষেত্রে রোগীর থেকে নেওয়া নমুনা আরটি-পিসিআর মেশিনে ফেলে তার স্ক্রিনিং করে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এই ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নমুনার দরকার হচ্ছে না। চেস্ট এক্স-রে ইমেজ কম্পিউটারে আপলোড করে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের টেকনোলজি ব্যবহার করে সংক্রমণ চিহ্নিত করা হচ্ছে। ফুসফুসে যদি সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ থাকে তাহলে ডিজিটাল এক্স-রে রিপোর্টে সংক্রামিত ফুসফুসের কোষের ছবি উঠবে। সেটাই টেকনিক্যালি অর্থাৎ কম্পিউটারের সাহায্যে নির্ধারণ করা হবে।