লকডাউন উঠলেই ফের বাজারে গতি ফিরবে। কল-কারখানাগুলো ঝুল ঝেড়ে উৎপাদনে মন দেবে। কিন্তু গরিব দেশগুলো দ্রুত এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবে না। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোকেই। ঠিক যেভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে বিধ্বস্ত ইওরোপের বাজারকে চাঙ্গা করতে মার্শাল প্ল্যান নিয়ে এসেছিল আমেরিকা। কোটি কোটি টাকার পুঁজি ঢালা হয়েছিল পশ্চিম জার্মানি, ইতালি আর ব্রিটেনের বাজারে। আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্টের ওয়েবসাইটে একথাই লিখলেন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার ডুফলো।
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকায় লেখা ওই নিবন্ধে জনস্বাস্থ্য পরিষেবায় গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ফের গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন দুই অর্থনীতিবিদ। জানালেন, গরিবের হাতে টাকা এলেই লকডাউনের ফল পাওয়া যাবে। বাজারে একবার চাহিদা বাড়তে শুরু করলেই অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগবে। আর সেই কারণেই জাপান, জার্মানি, ব্রিটেন, আমেরিকার মতো দেশগুলো বড় অঙ্কের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করছে। এদিকে ঋণের চাপ ও রাজকোষ শূন্য হওয়ার ভয়ে পিছিয়ে আসছে গরিব ও ভারতের মতো মধ্য আয়ের দেশগুলো। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে এই দেশগুলির কাছে সবচেয়ে বড় বাধা– বৈষম্য। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে সামাজিক ভারসাম্য। এখানেই প্রয়োজন মার্শাল প্ল্যানের। এগিয়ে আসুক উন্নত দেশগুলি। বিপুল অঙ্কের আর্থিক সাহায্য দিক গরীব দেশগুলোকে।
নোবেলজয়ী দম্পতির বক্তব্য, ‘যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে শুধু যে উন্নত দেশগুলির অর্থনীতিই দ্রুত সচল হয়ে উঠেছিল, তা নয়। আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ভিয়েতনামের অর্থনীতি। বৃদ্ধির হার ঠেকেছিল তলানিতে। কিন্তু পরের ৩০ বছরে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভিয়েতনাম, তা অবিশ্বাস্য। অভ্যন্তরীন সংস্কার ও বাণিজ্যের উদারীকরণের মাধ্যমেই ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়েছে দেশটির অর্থনীতি। বাজার খুলে দিতেই ছুটে গিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা।’