লকডাউনের জেরে এবার গভীর অন্ধকারে দিন কাটছে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের। দুর্গাপুজোর ছ’মাস বাকি থাকতে থাকতে বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই প্রতিমা তৈরির বায়না দেওয়া শুরু হয়ে যায় অন্য বছর। কিন্তু এ বার লকডাউনের কারণে কুমোরটুলি পাড়ায় এখনও পর্যন্ত একটিও বায়না আসেনি। যার ফলে এই লকডাউন ঘুম কেড়েছে কুমোরটুলির শিল্পীদের।
কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল বলেন, ‘বৈশাখের প্রথম সপ্তাহেই ৮-১০টা বড় পুজোর বায়না পেয়ে যাই। কিন্তু এ বার একটাও বায়না পাইনি। ওই বায়নার টাকায় আমরা আগেভাগে কালী মূর্তিও তৈরি করে রাখি। কারণ দুর্গাপুজোর পরপরই একাধিক পুজো থাকায় সেই সময়ে কালী ঠাকুর গড়ার আর সময় পাওয়া যায় না। লকডাউন আমাদের পেটের ভাত পুরোপুরি কেড়ে নিল।’
এছাড়াও কুমোরটুলির অন্যান্য শিল্পীরা জানাচ্ছেন, দুর্গা মূর্তির বায়না শুধু নয়, চৈত্র, বৈশাখ মাসে পাড়ায় পাড়ায় শীতলা পুজোর জন্যও ঠাকুর কিনতে কুমোরটুলিতে ভিড় করতেন মানুষেরা। এ বছর তৈরি শীতলা মূর্তি শিল্পীদের ঘরে ঘরে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে। লকডাউনের ধাক্কা লেগেছে বিদেশ থেকে আসা বরাতেও। অধিকাংশ প্রতিমার অর্ডার বাতিল হয়ে গিয়েছে এ বছর। কুমোরটুলির শিল্পী মিন্টু পাল বলেন, ‘বিদেশে পাঠানোর দশটা প্রতিমার বায়না বাতিল হয়েছে। চরম সঙ্কটের মধ্যে রয়েছি।’
এমনিতে কুমোরটুলিতে প্রায় ৭০০-র উপর শিল্পী রয়েছেন। লকডাউনের জেরে সকলেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘বেশির ভাগ উদ্যোক্তা দুর্গাপুজো কাটছাঁট করার কথা বলেছেন। বৈশাখ মাসেই আমরা বুঝে যাই, কতগুলো ঠাকুর গড়ার বায়না পাব। আর এই দুর্গাপুজোর আয়ের দিকেই আমরা সারা বছর তাকিয়ে থাকি।’
এই পরিস্থিতিতে শিল্পীদের আবেদন, রাজ্য সরকার যেন তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। কার্তিক পাল বলেন, ‘দুর্গাপুজোর কথা মাথায় রেখে শিল্পীদের আর্থিক সাহায্য করার জন্য এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী শশী পাঁজাকে অনুরোধ করেছি।’ লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই আর্থিক ভাবে দুর্বল শিল্পীদের দু’বেলা খাবার জোগাতে দলবদ্ধ হয়েছেন অন্য শিল্পীরাও। এদিকে মৃৎশিল্পীদের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেছেন, ‘ওঁদের অসুবিধার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান আমরা বের করতে পারব।’