করোনা মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোটা দেশজুড়ে চলছে একটানা লকডাউন। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার যার মেয়াদ আরও বাড়ানোয় এই মুহূর্তে চলছে তৃতীয় দফা। তবে এরই মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে ২৫০ কিমি দূরের বাড়ির দিকে রওনা দেন ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকরা। গতকাল প্রথমেই বালি সেতুর গোড়ায় জড়ো হয় সব মিলিয়ে ২৪ জনের দু’টি দল। দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে তাঁরা যাবেন বর্ধমান। তারপর আসানসোল হয়ে ধানবাদ। ঝাড়খণ্ডে ঢুকে বিভিন্ন গ্রামে ফিরবেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, প্রত্যেকেই শ্রমিক হিসাবে এ রাজ্যে কাজ করতে এসেছিলেন। কেউ নির্মাণশ্রমিক, কেউ বা কারখানায়। হঠাৎ লকডাউনে আটকে পড়েন সবাই। কাজ বন্ধ, মালিকরা বেতন দেননি। কয়েকদিন আগে তেলেঙ্গানা থেকে রাঁচিতে দেশের প্রথম ‘শ্রমিক স্পেশাল’ আসার খবর তাঁরা জানেন। তখন থেকে আকুল হয়ে ওঠেন বাড়ি ফেরার জন্য। ঝাড়খণ্ড সরকার একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলেছে। একটি হেল্পলাইন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। এই শ্রমিকরা কয়েকবার সেই নম্বরে ফোনও করেছিলেন। কিন্তু উত্তর মেলেনি। আবার অ্যাপ নেওয়ার মতো স্মার্ট ফোন তাঁদের নেই।
এদিকে রান্নার রসদও ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। কেউ কেউ সাহায্য দিয়ে গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা বড্ড কম। তাহলে উপায়? মিলিতভাবে রামবিলাস, কুশল, সনুরা সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফিরবেন পায়ে হেঁটেই। অথচ গোটা দেশে প্রথম ঝাড়খণ্ড সরকার নিজেদের লোকজনকে ঘরে ফেরাতে অন্য রাজ্যগুলিকে চাপ তৈরি করেছিল! এতটা রাস্তা রামবিলাসরা সঙ্গে নেওয়া চিড়েমুড়ি খেয়েই কাটাবেন। তবে বাড়ি ফেরার পথে বালি সেতুর গোড়ায় ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকদের আটকেছিল হাওড়া কমিশনারেটের পুলিশ। তাঁদের জানানো হয় সরকারি ক্যাম্প আছে। কারও থাকা-খাওয়ার অসুবিধা হবে না।
কিন্তু কয়েকজন সেই ক্যাম্পে গেলেও বেশিরভাগ শ্রমিককে রাখা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষায়। বাড়ি ফিরতে সবাই মরিয়া। এই কারণে কাউকে জোর করে আটকানো হয়নি। তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে ঝাড়খণ্ড সরকারের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, ‘বাংলা থেকে ধানবাদের দিকে শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বিষয়ে কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই।’ ধানবাদ গ্রামীণের পুলিশ সুপার অমিত রেণুও জানিয়েছেন, ‘ভিন রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যে কেউ ঘরে ফিরতে চান জানতে পারলেই আমরা বাস পাঠাচ্ছি। তবে বাংলা থেকে এমন কোনও শ্রমিকের আবেদন আমাদের কাছে আসেনি।’