করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে এখনও অবধি কোনও আশার আলো দেখতে পায় নি গোটা বিশ্ব। প্রায় রোজই একের পর এক মানুষের মৃ্ত্যু হতে হতে সংখ্যাটা ইতিমধ্যেই ২ লাখ ছুঁতে চলেছে। আক্রান্ত পেরিয়েছে ২৬ লক্ষ। সংক্রমণ রোখার উদ্দেশে লকডাউন গোটা বিশ্বের একটা বড় অংশ। কিন্তু এই সময়টা পার করে ফেলতে পারলেও, আগামী সময়ে আরও ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হতে চলেছে। এবার এমনই সতর্কবার্তা দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারির চেয়েও বেশি মর্মান্তিক হতে চলেছে আসন্ন দুর্ভিক্ষ৷
রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছে, বিশ্বের একটা বড় অংশে শুরু হয়ে গিয়েছে খাদ্যাভাব৷ খুব শীঘ্রই তা দুর্ভিক্ষের আকার নিতে পারে৷ এমনকি কিছু অঞ্চলে ইতিমধ্যেই দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি তাঁদের৷ তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে খাদ্য সঙ্কটে ভোগা দেশের তালিকায় খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, ইয়েমেন, কঙ্গো, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, ইথিয়োপিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, সুদান, নাইজেরিয়া ও হাইতি৷ বিশ্বের এরকমই বেশ কয়েকটি দেশ খাদ্য সঙ্কটে ভোগাকালীনই এসে পড়েছে করোনা ভাইরাস। রাষ্ট্রপুঞ্জ বলছে, অবিলম্বে পদক্ষেপ না করলে ইতিহাসের ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষ দেখবে বিশ্ববাসী৷ কোটি-কোটি মানুষ স্রেফ না খেতে পেয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে৷
রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ডেভিড বিসলের কথায়, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখনও পর্যন্ত মানবসভ্যতা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন এই ২০২০ সালেই৷ সিরিয়া, ইয়েমেন সহ একাধিক দেশে যুদ্ধ, আফ্রিকায় পঙ্গপালের হানা, লেবানন, কঙ্গো, সুদান ও ইথিয়োপিয়ায় একের পর এক প্রাকৃতি দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক মন্দা– তার সঙ্গে করোনা মহামারী– পরিস্থিতি যেন দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিল গোটা পৃথিবীকে৷’ তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান বলছে গোটা বিশ্বের প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ রাতে খিদে নিয়ে ঘুমোতে যান৷ সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ প্রায় খেতেই পান না৷ ২০২০ সালের শেষে এই করোনা লড়াই পার করে আরও ১৩ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারেন৷ ফলে পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষ কেবল খিদের জ্বালায় মারা যেতে পারেন৷
একইসঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এখনই করোনা পরবর্তী দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে সমাধান বের করতে না পারলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের মোকাবিলা করতে হবে দুনিয়াবাসীকে। ৩০টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশে খাবারের জন্য হাহাকার সবচেয়ে মারাত্মক আকার নেবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের এই আশঙ্কা কি পুরোটাই কাঠখোট্টা গাণিতিক পূর্বাভাস? নাকি এই আশঙ্কার পেছনে আরও জোরদার কোনও ইঙ্গিত রয়েছে? এই উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। তবে করোনা মহামারী যে সমাজ থেকে অর্থনীতি সবটাই ওলোটপালোট করে দিতে শুরু করেছে, তা বুঝতে কোনও বড় তত্ত্ব জানতে হয় না। এটা দৃশ্যতই সত্যি।