মঙ্গলবার বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি ছিল সংবিধানের জনক বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের জন্মদিবসও। গতকাল সকালে তাই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসে আম্বেদকর রচিত দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা উদ্ধৃতি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, লকডাউনে সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ‘দেশের স্বার্থে’ মানুষ ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক’-এর মতো নিজের ‘কর্তব্য’ পালন করছেন। কিন্তু মোদীর মুখে এ কথা শোনার পর থেকেই বিরোধীরা বলছেন, দেশের মানুষ প্রশ্ন তুলুন, সেটাই মোদী চান না। সে কারণেই তিনি ‘অনুশাসিত সিপাহি’ বা শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিকের প্রসঙ্গ টেনেছেন। একইসঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী ও তাঁর সরকার নিজের কর্তব্য কবে পালন করবেন? করোনা-মোকাবিলায় কবে পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট আর ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষা সামগ্রীর বন্দোবস্ত হবে? সরকার কবে গরিব মানুষ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সুরাহার ব্যবস্থা করবে?
যদিও গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে মোদী এ-ও বলেছেন, “যাঁরা দিনমজুর, রোজকার আয়ে যাঁদের সংসার চলে, তাঁরা আমার পরিবার। আমার অন্যতম অগ্রাধিকার তাঁদের কষ্ট লাঘব করা।’ কিন্তু বিরোধী দল থেকে সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন— সকলেরই বক্তব্য, মোদীর বক্তব্যে তার প্রতিফলন কোথায়? ভিনরাজ্যে আটকে পড়া ২০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের সমস্যা মেটানোর উপায় বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের কাজ খোয়ানো ও খোয়াতে বসা কর্মীদের জন্য আর্থিক প্যাকেজের কথা কেন বললেন না তিনি? সংস্থাগুলিকে কর্মী ছাঁটাই না-করার আর্জি জানিয়েই কি দায়িত্ব শেষ মোদীর? লকডাউন শেষ হবে, এই আশায় ঘরের ফেরার ট্রেন ধরতে হাজারে হাজারে পরিযায়ী শ্রমিক যে-ভাবে আজ বান্দ্রার পথে নেমে এসেছিলেন, তার জন্যও কেন্দ্রকেই দুষছে বিরোধীরা।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম টুইটারে লেখেন, ‘আগের দফায় ২১ দিন, এ বারে আরও ১৯— গরিবদের কার্যত নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই দেখে নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।… টাকা আছে, খাবার আছে। কিন্তু সরকার তার কিছুই দিতে নারাজ। আমার প্রিয় দেশ, কাঁদো!’ এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কৌরের অভিযোগ, আতান্তরে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক, ঠিকা কর্মী ও গরিবের জন্য সরকার কী করবে, তা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি মোদী। এই অভিযোগও উঠছে যে, তিন মাস বিনামূল্যে বাড়তি রেশন দেওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা ঠিক মতো পাচ্ছেন না। কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, মোদী বারবার কর্মী ছাঁটাই না-করার কথা বললেও রোজ ছাঁটাইয়ের ভূরি ভূরি অভিযোগ আসছে।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারির প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর কথা না মেনে যারা ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে সরকার? সরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, ২০ এপ্রিলের পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র ভাবছে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তাঁদের সুরাহার পথ খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছেন অর্থ, শ্রম-সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রককে। শ্রম মন্ত্রক জানিয়েছে, সারা দেশে ২০টি কন্ট্রোল রুম হবে। ফোন বা ই-মেলে মজুরি সংক্রান্ত অভিযোগ জানানো যাবে সেখানে। পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা সম্পর্কে সব রাজ্যের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলবে কন্ট্রোল রুমগুলি।