বাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া টাকা মেটাচ্ছে না কেন্দ্র। বারবারই এই অভিযোগ করে এসেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। প্রাপ্য টাকা চেয়ে বারকয়েক চিঠিও লেখা হয়েছে রাজ্যের তরফে। তবে শুধু বাংলাই নয়, বিভিন্ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাজ্যগুলির যে অর্থ প্রাপ্য, তার কতটা দেয়নি কেন্দ্র? এর কোনও হিসেবই নেই মোদী সরকারের কাছে! বিরোধীদের অভিযোগ নয়, মঙ্গলবার লোকসভায় এ কথা মেনে নিয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরই৷ তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মালা রায়ের এক প্রশ্নের উত্তরে অনুরাগ লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, ‘রাজ্যগুলিকে মোট কত টাকা দিতে হবে, কেন্দ্রীয় ভাবে তার কোনও পরিসংখ্যান রাখা হয় না৷’
রাজ্যগুলির প্রাপ্য বকেয়ার হিসেব না দিলেও কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাছে পাওনাদারদের মোট প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ হল ২,২৭,৭২৮ কোটি টাকা! তা-ও এই তথ্য আপডেটেড নয়। সরকারি পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, এই বিশাল অঙ্কের টাকা গত বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাছে পাওনাদারদের প্রাপ্য৷ কেন্দ্রের দেওয়া পরিসংখ্যানে মোট ৩৪৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে সব থেকে বেশি অঙ্কের বকেয়া মেটাতে হবে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনকে৷ সেই পরিমাণ ৩৮,৬৭৯ কোটি টাকা৷
এর পরেই আছে হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, যাদের দেনা চোকাতে হবে ১৮,৮৭৭ কোটি টাকা৷ তৃতীয় স্থানে আছে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া, যাদের ১৮,৪৮৬ কোটি টাকা দেনা মেটাতে হবে৷ ভারত পাম্পস অ্যান্ড কম্প্রেসরকে মেটাতে হবে ১৭,২৩৫ কোটি টাকা৷ ঘটনা হল, এই সংস্থাগুলোর তুলনায় অনেক কম বকেয়া মেটাতে হবে বহুচর্চিত রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকে, যাদের দেনা মেটাতে হবে ‘মাত্র’ ৮২০৪ কোটি টাকা! মোদী সরকার যখন বারবার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আর ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির কথা বলছে, তখন সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানেই এই বিপুল বকেয়ার কথা জানা যাচ্ছে৷
তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের অভিযোগ, এত টাকা বকেয়ার বিষয়টিই প্রমাণ করছে দেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘মোদী সরকার যে দেশের অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়েছে, তার প্রমাণ হল এই পরিসংখ্যান৷ আসল তথ্য তাঁরা চেপে যাচ্ছেন৷ এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের বকেয়া দেওয়া হচ্ছে না৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রচুর পরিমাণ টাকা প্রাপ্য রয়েছে, তা দেওয়া হচ্ছে না৷ আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন, তার পরেও রাজ্য তার প্রাপ্য পাচ্ছে না৷ সরকার মুখেই যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর মধ্যে সহযোগিতার কথা বলে আসছে, কাজে তার কোনও প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না৷ ’
