ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কম্যান্ডিং অফিসারের পদে মহিলারা যোগ্য কিনা, সেই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক দীর্ঘদিনের। রণক্ষেত্রে মহিলাদের কম্যান্ডিং অফিসার হিসেবে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে জওয়ানরাও ততটা প্রস্তুত নন। তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে শুরু করে নানা অসুবিধা রয়েছে মহিলাদের। দেশের শীর্ষ আদালতকে এমন যুক্তিই দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই যুক্তির পাল্টা দেশের শীর্ষ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, সেনাবাহিনীর যে কোনও পদেই যোগ্য মহিলারা। যুক্তি নয়, বরং মানসিকতার বদল দরকার। তবেই লিঙ্গবৈষম্যের এই দীর্ঘদিনের ধারণা ঘুচবে। সুপ্রিম কোর্টে নির্দেশ মেনেই শনিবার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে বহাল হলেন মাধুরী কানিৎকার।
এই নিয়ে তৃতীয়বার। লিঙ্গবৈষম্যের সংকীর্ণ মানসিকতা ঘুচল। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদে ফের নারীশক্তির জয় হল। দীর্ঘদিনের ট্যাবু ভেঙে মেজর জেনারেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদে উঠে এলেন মাধুরী কানিৎকার। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মাধুরী বর্তমানে ইনটিগ্রেটেড ডিফেন্স স্টাফের (মেডিক্যাল) ডেপুটি চিফ। ভারতীয় বাহিনীর চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের অধীনে কাজ করবেন তিনি।
এখনও অবধি ভারতীয় বাহিনীতে তিনজন মহিলা লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদ পেয়েছেন। বায়ুসেনায় পুনিতা অরোরা ছিলেন দেশের প্রথম মহিলা লেফটেন্যান্ট জেনারেল। পদ্মাবতী বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম এয়ার ভাইস মার্শাল, এয়ার ফোর্স মেডিক্যালের প্রথম মহিলা এডিজি (অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল)। তিনি ছিলেন চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীও। এর পরেই মাধুরী কানিৎকার, তৃতীয় বারের জন্য মহিলা লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদ পেলেন। তিনিও দেশের প্রথম শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ যিনি ভারতীয় বাহিনীতে কম্যান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছেন।
গত বছরই লেফটেন্যান্ট জেনারেলের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন মাধুরী। কিন্তু এই দীর্ঘ টালবাহানার জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। শনিবার ইনডিগ্রেটেড ডিফেন্স স্টাফের ডেপুটি চিফ হিসেবে দায়িত্বভার তুলে নেন। আর্মড ফোর্স মেডিক্যাল কলেজের (এএফএমসি)টপার মাধুরী কানিৎকার তাঁর দুরন্ত ফলের জন্য রাষ্ট্রপতি মেডেল পেয়েছিলেন। এইমসের পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের উপদেষ্টা বোর্ডের প্যানেলেও ছিলেন একসময়। পুণে ও দিল্লিতে শিশুদের চিকিৎসায় নতুন ইউনিটও তৈরি করেছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাধুরী। ২০১৭ সালে এএফএমসি-র প্রথম মহিলা ডিনও হন তিনি।
গত বছর নর্দার্ন কম্যান্ডে উধমপুরের মেজর জেনারেল (মেডিক্যাল)হিসেবে দায়িত্বভার সামলেছিলেন তিনি। সন্ত্রাসের আবহে মাধুরী কানিৎকারের সাহস ও দক্ষতা মুগ্ধ করে সেনা কর্তাদের। ওই বছরই লেফটেন্যান্ট জেনারেলের জন্য নির্বাচন করা হয় মাধুরীকে। বলেছেন, “মহিলাদের পিছিয়ে গেলে চলবে না। মনে করতে হবে সেনা ইউনিফর্মে গোটা বিশ্বের অর্ধেকটাই তুমি জয় করেছ। বাকিটা তোমার সাহস ও দক্ষতা নিয়ে জিতে নেবে।”
সেনাবাহিনীতে ৩৭ বছর ধরে কর্মরত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাধুরী। তাঁর স্বামী রাজীবও সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদে রয়েছেন। মাধুরী বলেছেন, “এই লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা ভ্রান্ত। ভারতীয় সেনাবাহিনীও একেবারেই স্বচ্ছ, এখানে যে কোনও পদেই মহিলারা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। সেনা ইউনিফর্ম পরলেই মনে হয় দেশ সেবার জন্য আমরা তৈরি। যত কঠিন পথই হোক না কেন, নিজেদের সেরাটা দেব।”