এ যেন উলট পুরাণ! এতদিন নরেন্দ্র মোদী মানেই বিজেপির কাছে ছিল মানুষের মন জয় করার ম্যাজিক। আর অমিত শাহ মানেই ‘চাণক্য’র মতো কূটনৈতিক চাল দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা। কিন্তু এই ‘মিথ’ এবার হয়তো ভাঙতে চলেছে। কারণ লোকসভা ভোটের পর থেকে কোনও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেই কাজ করছে না মোদী-শাহ জোড়া ফলা। যেমন দিল্লীর ক্ষেত্রেও চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি মোদী-শাহ। মোদীর পাশাপাশি প্রচারের ময়দানে অল্প দিনে ৩৫ টি জনসভা করে দিল্লী কার্যত চষে ফেলেছিলেন অমিত শাহ। তাঁদের যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গিয়েছেন ২০০ জন সাংসদ, কেন্দ্রের ৭০ জন মন্ত্রী, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও কেজরি ঝড়ে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল গেরুয়া। ট্রেন্ড বলছে আরও একবার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সঙ্গী করে দিল্লীর মসনদে বসছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
শেষ পাওয়া খবরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লীতে আম আদমি পার্টি এগিয়ে রয়েছে ৬২টি আসনে। বিজেপির কপালে জুটছে মাত্র ৮টি আসন এবং এখনও পর্যন্ত হাতই খুলতে পারল না কংগ্রেস। পরিস্থিতি যে এতটা খারাপ হতে পারে তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কেন্দ্রীয় বিজেপির চাণক্য অমিত শাহ। দিল্লী দখলের উদ্দেশ্যে সর্ব শক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। বরাত দিন এক করে গোটা দিল্লি জুড়ে অল্প কয়েক দিনে ৩৫টি জনসভা করেন তিনি। পিছিয়ে ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। দিল্লী দখলের জন্য লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল ২০০ জন সাংসদকে। ৭০ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লাগাতার প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। বাদ ছিলেন না যোগী আদিত্যনাথ, বিপ্লব দেব, নীতিশ কুমারের মতো মুখ্যমন্ত্রীরাও। তারপর যে এমন বেহাল দশা হতে পারে বিজেপির তা বোধহয় ভাবতেও পারেননি দলের শীর্ষ নেতারা।
অবশ্য বিজেপির এই করুন হালের পিছনে বেশ কিছু কারণকে তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, ৫ বছরের ক্ষমতায়নে কেজরিওয়ালের উন্নয়ন মূলক একের পর এক কাজ। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, মহিলাদের বাস ও মেট্রো ফ্রি, শহর জুড়ে নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা। যমুনা বাঁচাও প্রকল্পের মতো উল্লেখযোগ্য দিকগুলি। আগামী দিনে দিল্লীকে আরও সমৃদ্ধ করতে কেজরির প্রতিশ্রুতিগুলিও অন্যতম। অন্যদিকে বিজেপির হাতে ছিল শাহিনবাগ। সিএএ বিরোধী এই মঞ্চকে হাতিয়ার করে একের পর এক কুকথার ফুলঝুরি ছুটিয়েছিল বিজেপি নেতারা। তবে দিল্লীর ফল বলছে, বিজেপির এ হেন কুকথাকে ভাল চোখে দেখেনি দিল্লীবাসী। সব মিলিয়ে মোদী ম্যাজিক ফোটালেও আরও বিজেপির কাছে একবার অধরাই থেকে গেল দিল্লী।