কালো ক্যানভাসে যখন তুলি দিয়ে কিছু ফুটকি দিলেন – এক লহমায় মনে হল, এ ছবির থিম হতে পারে বুঝি ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা..’। রবি ঠাকুরের এ গান, তাঁর বড় প্রিয়।
কিন্তু না! পরের তুলির টানে রাতারাতি অনেকটাই বদলে গেল ছবিটা। মনে হল, এতো বুঝি কন্যাশ্রীর মুখ হতে চলেছে। মেয়েদের আর্থ সামাজিক ক্ষমতায়ণের জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্পও তাঁর খুবই কাছের। তিনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই বলেন, কন্যাশ্রী বিশ্বের দরবারে নতুন করে চিনিয়েছে বাংলাকে।
হ্যাঁ কন্যাশ্রীর মুখটাই হল, তবে সেই মেয়ের ডান চোখে লেখা, ‘এন’, আর তার বাম চোখে লেখা ‘ও’। আর কপালে লেখা ‘সিএএ’। চিবুকের কাছে বেশ কিছু বড় বড় গোল্লা। তার নিচে বাঁ দিকে লেখা ‘এনপিআর’ , আর ডান দিকে লেখা ‘এনআরসি’। অর্থাৎ ‘নো সিএএ, এনআরসি, এনপিআর’।
মঙ্গলবার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে শিল্পীরা প্রতিবাদ দেখিয়েছেন নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তথা এনআরসি-র বিরুদ্ধে। সেই অনুষ্ঠানে সামিল হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে বার্তা দেবেন সেটাই ছিল স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতা গত কয়েকদিন ধরে প্রচারে গিয়ে বলছেন, এনপিআর এবং সিএএ করেও বিজেপি কিছুই করতে পারবে না। দেশে বিভাজন তৈরি করতে পারবে না। উল্টে গোল্লা পাবে ওরা। সেই গোল্লা পাওয়ার প্রতীক হিসাবেই তৃণমূল নেত্রী ওগুলো এঁকেছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
এদিন মমতার সঙ্গেই ছবি আঁকতে দেখা যায় শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ও শিল্পী তথা রাজ্যসভার সাংসদ যোগেন চৌধুরীকে। ছবি আঁকার পর মমতা বলেন, ‘প্রাণের টানে, রঙের টানে, তুলির টানে প্রতিবাদ করতে এসেছি। আমাদের সবার একটাই কথা, মানুষে মানুষে বিভাজন করার আইন চলবে না। নো ক্যা, নো এনআরসি, নো এনপিআর।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ভাবে এই আন্দোলন জারি রাখতে হবে। কখন ও মিছিল, কখনও মিটিং, কখনও গান আবার কখনও ছবি এঁকে। মনে রাখবেন, রাস্তাতেই আমাদের থাকতে হবে। কারণ রাস্তাই আগামী দিন রাস্তা দেখাবে।’