পুরভোটের আর কয়েক মাস বাকি। তাই শুক্রবার ‘দিদিকে বলো’র পর্যালোচনা বৈঠকে ডাক পড়েছিল কলকাতার সব বিধায়ক এবং কাউন্সিলরদের। গতকাল ৯ নম্বর ক্যামাক স্ট্রিটের ওই বৈঠকে বক্তব্য পেশ করেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দলের সাংসদ তথা যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মেয়র ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর প্রমুখ।
দলের তরফে বৈঠকে আগত কাউন্সিলর ও বিধায়কদের বলা হয়েছে, আপনারা সহজ সরল জীবনযাপন করুন। কোনও বৈভব নয়। সততা, স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করতে হবে। দলের যুব সভাপতি অভিষেক তো স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, কে কেমন কাজ করছেন, কার কাজ কতটা বাকি আছে, এলাকায় কার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল, কারা ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচী পালন করেনি- সেই সবের হিসেব রেখেছে দল। তার ভিত্তিতেই মিলবে ভোটের টিকিট। ‘দাদা-দিদি’র কাছে তদ্বির করে লাভ নেই।
কোনও নেতার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে তা মেনে নেওয়া হবে না বলে যেমন জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করেছেন দলের যুব সভাপতি। তেমনি দলের নির্বাচনী-পরামর্শদাতা হিসেবে প্রশান্ত কিশোরও জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, ভোটে জেতার দায়িত্বটা প্রার্থীদেরই। জনসংযোগ বাড়িয়ে নিজেকেই জেতার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। তিনি শুধু জনসংযোগের পথ মসৃণ করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, এর আগেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর ভূমিকা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন পিকে। গতকালের বৈঠকেও কতকটা একই সুরে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এখানে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। তাই আপনারা আমার থেকে বাংলার রাজনীতি থেকে অনেক ভাল বোঝেন। আমি শুধু আপনাদের জনসংযোগের একটা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি গড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। দিদিকে বলো যত বেশি করবেন তত সুফল পাবেন।’
পিকের স্পষ্ট অভিমত, কন্ট্রাক্টর আর কাউন্সিলার একসঙ্গে হওয়া যাবে না। মানুষের সমস্যা শুনুন, সমাধান করুন, না পারলে ‘দিদিকে বলো’র নম্বরে ফোন করতে বলুন। প্রোমোটারি, কন্ট্রাক্টরি করলে পুর ভোটে দাঁড়ানো যাবে না। নিজেদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে সচেতন হোন। নিজেদের বিত্ত বৈভব দেখানো চলবে না। জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তির মতোই নিজেদের ভাবমূর্তি তৈরি করুন।’
দলের তরফে কাউন্সিলরদের বলা হয়েছে, ৫০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে – এটা ধরে নিয়েই এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে। মানুষের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ‘দিদিকে বলো’-তে আরও দুটি করে কর্মসূচী করতে হবে। সেখানে মানুষের ক্ষোভ শুনতে হবে। ঠান্ডা মাথায় সে সব নিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। দুর্ব্যবহার করা চলবে না। সকলেই টিকিট পাবেন। আবার টিকিট পাচ্ছিই, এটা ধরে নেবেন না।
এর পাশাপাশি কাউন্সিলর-বিধায়কদের সতর্ক করে দিয়ে দল জানিয়েছে, জেতার মার্জিন বাড়ানোর জন্য জোরজার করা যাবে না। মানুষকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিরোধী দল ভোটের সময় গোলমাল করবে। তার যাবতীয় দায় আমাদের ওপর চাপাবে, তাই ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। কোনও প্ররোচনায় পা দেওয়া চলবে না। যেসব পুরনো কর্মী দলে ফিরে আসছেন, তাঁদের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।