সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে প্রথম থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মিছিল থেকে শুরু করে পথসভাও করেছেন তিনি। সেখানেই থেমে না থেকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আর্জি নিয়ে অ-বিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের সব বিরোধী নেতাদের চিঠিও দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। এবার মমতার দেখানো পথেই হাঁটলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
গত মঙ্গলবারই কেরালা বিধানসভায় সিএএ বিরোধী রেজিলিউশন পাশ করিয়েছে সে রাজ্যের সরকার। যা নিয়ে তোপ দেগে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এই রেজিলিউশনকে অসাংবিধানিক বলেছেন। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করেই এবার সিএএ বিরোধী দেশের ১১ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন বিজয়ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ দেশের এগারো জন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিজয়ন আবেদন জানিয়েছেন, ‘দেশের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বজায় রাখতে এখন জোটবদ্ধ হতে হবে। দেশের বহু মানুষ এই আইনের বিরোধী। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
এর আগে মমতার চিঠির প্রত্যুত্তর দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। পাল্টা চিঠি দিয়েছেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারও। প্রত্যাশিতভাবেই তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়েছেন। মমতার উদ্দেশ্যে চিঠিতে শরদ পাওয়ার লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। আপনার সঙ্গে আমি সহমত। গণতন্ত্র রক্ষায় যে কোনও কর্মসূচিতে যোগ করলে ভালো লাগবে।’
নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং প্রস্তাবিত নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশেই। মোদী-মমতার এই দ্বৈরথের ঠিক পরের দিন ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি তৃণমূলনেত্রীর পালেই হাওয়া টেনেছে। পড়শি রাজ্যের এই ফলাফলকে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে ‘নাগরিকদের রায়’ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরার অব্যবহিত পরেই তাঁর এই চিঠি প্রকাশ্যে আসে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সিএএ ইস্যুতে যেভাবে মমতার পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে গোটা দেশ, তাতে বিজেপির চাপ নিঃসন্দেহে বাড়ছে। এবার পিনারাই বিজয়নও চিঠি লিখে সেই জোটকে আরও খানিকটা মজবুত করল বলেই মনে করছেন অনেকে। এর আগে কলকাতার একাধিক মিছিল থেকে তিনি মৌখিক আবেদন জানিয়েছিলেন, ‘গোটা দেশ রাস্তায় নেমে আসুন। ধীরে ধীরে সব রাজ্যকেই সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে।’ সেক্ষেত্রে রাজ্যের অন্যতম প্রতিপক্ষ বামেদেরও তিনি সরিয়ে রাখেননি। এবার পাল্টা একজন বাম মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেই সংহতির জন্য চিঠি এল মমতার কাছে।