সিএএ-এনআরসি নিয়ে গোটা দেশে আগুন জ্বলছিলই। এবার নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এনপিআর নিয়ে। একদিকে এনপিআর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলছেন এক কথা। অন্যদিকে, অমিত শাহ বলছেন আর এক কথা। এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, এনপিআর দু’ধরনের তথ্যই সংগ্রহ করবে। ডেমোগ্রাফিক এবং বায়োমেট্রিক।
যদিও দ্বিতীয়টির জন্য আধার তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। তবে ২০২০ এনপিআর-এর জন্য আধার নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় বলে জানানো হচ্ছে। আধার ছাড়াও কেউ যদি স্বেচ্ছায় প্যান, ভোটার পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্য দিতে চান, তা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেছেন, কোনও অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। সরকার নাগরিকদের সততায় আস্থা রাখছে। কিন্তু কার্যত আট ধরনের ‘অতিরিক্ত তথ্য’ চাওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে আছে অতি বিতর্কিত বাবা-মায়ের জন্মস্থান এবং তারিখ সম্পর্কিত তথ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত তথ্য সরকার চাইছে কেন? বিশেষত যেখানে ব্যক্তিমানুষের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হতে পারে!
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দুটি মূল কারণ দেখাচ্ছে। প্রথমত, সরকারের মতে প্রত্যেক দেশেরই জনবিন্যাস এবং বাসিন্দাদের ব্যক্তি ও পারিবারিক পরিচিতির এক সুসংহত পঞ্জী থাকা উচিত। দ্বিতীয়ত, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার পরিচয়পত্রের মতো তথ্য থাকলে ভারতে একজন বাসিন্দার জীবনযাপন আরও সহজ হবে। সরকারি লাল ফিতের ফাঁস অনেক কমে যাবে।
তবে এই তথ্যের গোপনীয়তা কীভাবে রক্ষা করা হবে, যাতে এই বিপুল পরিমাণ তথ্য কোনও তৃতীয় পক্ষের হাতে না যায়, তা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সে নিয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও পরিকল্পনা সরকার ঘোষণা করেনি।
উল্লেখ্য, জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জী, অর্থাৎ এনপিআর-এর প্রক্রিয়া শুরু হবে এপ্রিল ২০২০ থেকে। গত মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এই খাতে ৩৯০০ কোটি টাকার খরচ মঞ্জুর করেছে। এই বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে যে তথ্য জোগাড় হবে, তা দেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি চালুর প্রথম ধাপ বলেই মনে করছেন একটা বড় অংশের মানুষ।
যদিও এনপিআর নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি, যাঁরা সাধারণত ভারতে থাকেন, তাঁদের পঞ্জীকরণ। সাধারণত ভারতের বাসিন্দা বলতে, যিনি কোনও এক জায়গায় গত ছয় মাস ধরে বসবাস করছেন, বা পরের ছয় মাস ধরে থাকার কথা ভেবেছেন। কাজেই এনপিআর ভারতের নাগরিকদের নির্দিষ্টকরণের প্রক্রিয়া নয়।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে জনগণনা হবে ভারতে। জানা গিয়েছে, তার প্রথম পর্যায় হিসেবে বসতবাড়ির তালিকা তৈরির পাশাপাশি এলাকা, উপজেলা, জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে এনপিআর-এর কাজ চালাবে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার দফতর।
আরজিআই এর মধ্যে একটি পাইলট প্রোজেক্ট শুরুও করে দিয়েছে ১২০০ গ্রাম এবং ৪০টি শহর, নগরের মোট ৫২১৮টি ব্লকে। বাসিন্দাদের থেকে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মূল পর্যায়ের কাজ শুরু হবে ২০২০ এপ্রিলে, চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
নাগরিকত্ব আইনের জোরে মোদী সরকার দেশের সব বাসিন্দার নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক করতে পারে। এরপর যদি দেশ জুড়ে এনআরসি চালু হয়, তা হলে এনপিআর তালিকা থেকে নাগরিকদের শনাক্ত করার কাজ শুরু হতে পারে। সরকার যদিও বলছে, এনপিআরের ভিত্তিতে সারা দেশে এনআরসি চালু করার কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ফাইলেই গতকাল ফাঁস হয়ে গিয়েছে আসল সত্য।