‘বিহারে তো হবেই না। গোটা দেশজুড়ে এনআরসি করা কখনই সম্ভব না।’ এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাবে এমনটাই জানিয়েছেন এনডিএ শরিক দলের সহ সভাপতি তথা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার যে গোটা দেশে এনআরসি লাগু করার হুমকি দিচ্ছেন, তা ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছুই নয়। এমনটাই মনে করছেন তিনি। প্রশান্তের দল জেডিইউ নাগরিকত্ব বিলের সমর্থনে ভোট দিলেও আগাগোড়া এই বিলের কড়া প্রতিবাদ ও বিরোধিতা করে এসেছেন প্রশান্ত। লোকসভা ও রাজ্যসভায় জেডিইউ এই বিলকে সমর্থন করায় দলের সঙ্গে ফাটল তৈরি হয়েছে তাঁর। এই অবস্থায় বড় মন্তব্য শোনা গেল পিকে-র মুখ থেকে।
প্রশান্ত কিশোরের মতে, শুধু এনআরসি বা শুধু সিএএ-তে সমস্যা নেই। কিন্তু এনআরসি ও সিএএ-র যুগলবন্দি বিপজ্জনক বলে মনে করছেন তিনি। প্রশান্ত বলেছেন, নাগরিকত্বপঞ্জী এবং নাগরিকত্ব আইন একত্রে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। কেননা এই দু’টো পাশাপাশি চলে এলেই ধর্মের নিরিখে বৈষম্য করে। শুধু ধর্ম নয়, মানুষের জাত-পাত, অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়বেন গরীব মানুষরা। যারা টাকার অভাবে এখনও পর্যন্ত নিজেদের নথিপত্র জোগাড় করে উঠতে পারেননি। প্রসঙ্গত, এই জোড়া আইনের সমর্থন করায় জেডিইউ থেকে ইস্তফাও দিতে চেয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। যদিও নীতিশ কুমার তাঁর ইস্তফা মঞ্জুর করেননি। এরপরই চাপের মুখে নীতিশ ঘোষণা করে দেন, বিহারে কখনই এনআরসি লাগু করতে দেবেন না।
এই নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের দল সবসময়ই বলে এসেছে যে বিহারে এনআরসি-র প্রয়োজন নেই। নীতিশ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে এই জায়গা থেকে সরে আসবেন না। আর আমি নিশ্চিত যে বিহারে সেটা হবেও না।’ কিন্তু দেশ জুড়ে এনআরসি হওয়া সম্ভব নয় এটা কেন বলছেন প্রশান্ত? তাঁর যুক্তি, ‘দেশে এই মুহূর্তে ১৬টি রাজ্যে অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন যেখানে ভারতের ৬৫ শতাংশ জনসংখ্যাও রয়েছে। সেই কারণেই আমি বলছি দেশজুড়ে এনআরসি হওয়া কখনই সম্ভব নেই। এটা নিয়ে আমার কোনও দ্বিমত নেই।’ একই সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর মনে করিয়ে দিয়েছেন যে কোনও আইন রাজ্যে প্রণয়ন করতে গেলে রাজ্যের মেশিনারিই কেন্দ্রকে ব্যবহার করতে হয়। রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া কখনই এই আইন লাগু করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই এনআরসি ও সিএএ-র জোড়া ফলা কখনও সফল হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।