সিএএ নিয়ে উত্তাল বাংলা। শুধু বাংলাই নয়, এই জনবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। এবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসির প্রতিবাদে মুম্বইয়ের আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে বিক্ষোভ দেখাল কয়েক হাজার জনতা। রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে পড়ুয়া, এমনকি বলিউড শিল্পীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সকলে সম্মিলিত ভাবে স্লোগান তুললেন ‘হিন্দু-মুসলিম এক হ্যায়, মোদী-শাহ ফেক হ্যায়।’ মুম্বইয়ে বসবাসকারী উত্তর-পূর্বের বাসিন্দারাও এদিনের জমায়েতে হাজির ছিলেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের এই বিক্ষোভে কার্যত দুর্গে পরিণত হয়েছিল দক্ষিণ মুম্বই।
জমায়েত থেকে ‘স্বৈরাচারী’ মোদী-শাহকে হটানোর ডাক দেন উপস্থিত জনতা। আকাশের দিকে হাত তুলে ‘মোদী সে আজাদি’র স্লোগান তোলেন তাঁরা। প্লাকার্ড, ব্যানার, হ্যান্ড বিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ময়দানের দিকে ঢুকতে থাকেন কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী। কোথাও লেখা রয়েছে, ‘হিন্দু-মুসলিম এক হ্যায়, মোদী-শাহ ফেক হ্যায়।’ আবার কোথাও লেখা রয়েছে ‘কিসি কে বাপ কা হিন্দুস্থান থোড়ি হ্যা।’ শুধু মুম্বই নয়, পুনে, নাগপুর, নাসিক ও অমরাবতীতেও এদিন একই ধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে।
সপ্তাহের কাজের দিন হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দক্ষিণ মুম্বইয়ের এই ময়দানে নেমেছিল প্রতিবাদী মানুষের ঢল। শামিল হয়েছিল কংগ্রেস, সিপিআই থেকে ছোট, বড় বহু রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাজ বব্বর ও মিলিন্দ দেওরা। হাজির হয়েছিলেন অশীতিপর স্বাধীনতা সংগ্রামী জি জি পারিখ। বলিউড শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ফারহান আখতার, সুশান্ত সিং রাজপুত, রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা, সইদ মির্জা প্রমুখ।
নাগরিকত্ব বিক্ষোভ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘পোশাক’ মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর ছাত্রী আয়েশা। তিনি বলেন, খাকি রঙের হাফ প্যান্ট ও সাদা জামা পরা নাথরাম যে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, তা যে কেউ বলতে পারে। সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মির্জা বলেন, আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা গোলওয়ালকার এবং বি আর আম্বেদকার, মহাত্মা গান্ধী ও নাথুরাম গডসের মধ্যে বেছে নেওয়ার সময় এসেছে। এদিনের বিক্ষোভে চার্চগেট, পুনে ও আওরঙ্গাবাদে নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে হওয়া আন্দোলন চাপা পড়ে গিয়েছে।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ খুলেছে বলিউড কলাকুশলীদের একাংশ। হ্যাশট্যাগে ‘হ্যাভ ভয়েস উইল রাইস’, ‘হ্যাভ ভয়েস মাস্ট রাইস’ লিখে ট্যুইটারে প্রিয়াঙ্কা চোপরা লিখেছেন, ‘প্রতিটা কণ্ঠ মূল্যবান। প্রতিটা কণ্ঠ ভারতকে পাল্টাবে।’ কঙ্গনা রানাওয়াত বলেছেন, ‘আমরা ব্যাপক সম্ভাবনার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও বিভাজনমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।’ কলকাতায় বিক্ষোভে শামিল হয়ে অপর্ণা সেন বলেন, ‘আমাদের উপমহাদেশ বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, জাতির। এই ভিত্তি যদি ভেঙে যায়, তাহলে দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।’ হ্যাশট্যাগে ‘এক ভারত’ লিখে দিয়া মির্জার ট্যুইট, ‘আমার মা হিন্দু, আমার জন্মদাতা বাবা খ্রিস্টান। আর পালিত বাবা মুসলমান। আমার সমস্ত সরকারি পরিচয়পত্রে ধর্মের জায়গা ফাঁকা থাকে। আমি ভারতীয় কি না, তা কি ধর্ম ঠিক করে? এটা কখনও হয়নি এবং আশা করি হবেও না।’