মৃত্যুদণ্ডের সব প্রস্তুতি এক রকম সারা হয়ে গিয়েছে তিহাড় জেলে। প্রস্তুত দড়ি থেকে শুরু করে ফাঁসুড়েও। কিন্তু এরইমাঝে শীর্ষ আদালতে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে নির্ভয়া ধর্ষণ ও খুনের আসামী অক্ষয় ঠাকুর। পাল্টা দোষীদের দ্রুত মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানিয়ে দিল্লীর পাতিয়ালা হাউস আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন নির্ভয়ার মা। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি স্তগিত করল দিল্লী আদালত।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর। আপাতত চারজন সাজাপ্রাপ্তের শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা করা হচ্ছে। তিহাড়ের তিন নম্বর জেলে ফাঁসি দেওয়া হতে পারে তাদের। সেখানে চলছে জোর প্রস্তুতি। এই প্রথমবার একসঙ্গে চারজন সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসি দেওয়ার সম্ভাবনা।
শুক্রবার নির্ভয়ার মায়ের তরফে দায়ের হওয়া আবেদনের শুনানিতে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর, এদিন আদালত চত্ত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্ভয়ার মা আশাদেবী বলেন, ‘গত ৭ বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আরও একটা সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারব। আশা করছি আগামী ১৮ ডিসেম্বর দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হবে’। এদিকে ধর্ষণ মামলার অন্যতম দোষী অক্ষয় ঠাকুর তাঁর মৃত্যুদণ্ডের সাজার পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে যে আবেদন করেছে সেই মামলার শুনানি হতে চলেছে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। এ প্রসঙ্গে আশাদেবী বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ওই ধর্ষকের আর্জি খারিজ হয়ে যাবে।’
পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিন দোষীদের কী সাজা শোনাবে আদালত সেটা জানেন না আশাদেবী। তাঁর কথায়, “জানি ধৈর্য্য শেষ হয়ে আসছে। এতগুলো বছর ধরে প্রতিদিন তিলে তিলে যন্ত্রণা সহ্য করছি। মেয়েটার কষ্টের কথা মনে হলে মন দুমড়ে মুচড়ে যায়। আরও ক’টা দিন না হয় অপেক্ষা করব। আশা রাখছি ১৮ ডিসেম্বর আদালত দোষীদের ফাঁসির সাজাই শোনাবে।”
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। রাতের দিল্লীতে ফাঁকা বাসে জোর করে তুলে নেওয়া হয় বছর কুড়ির প্যারা মেডিক্যাল ছাত্রীকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক বন্ধুও। ফাঁকা বাসে ওই তরুণীর উপর অমানবিক অত্যাচার চলে। ছ’জন মিলে প্যারা মেডিক্যালের ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনায় ৫ অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশ দেয় নিম্ন আদালত। আর এক দোষী নাবালক ছিল। তাই সর্বোচ্চ তিন বছর জেলে কাটানোর পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জেলে থাকাকালীনই রাম সিং নামে এক দোষী আত্মহত্যা করে। দিল্লী হাইকোর্টে ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজার আরজি জানায় বাকি তিন দোষী। দিল্লী হাইকোর্টে সেই আর্জি খারিজ হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টেও খারিজ হয় এই আবেদন। বর্তমানে সাজা মকুবের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম অপরাধী অক্ষয় ঠাকুর। আগামী ১৭ ডিসেম্বর সেই রায় পুনর্বিবেচনার আরজি শুনবে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ।