নেপথ্যে থেকে বিজেপিই আসাদউদ্দিন ওয়াইসিকে মদত দিচ্ছে, দিন কয়েক আগেই সরাসরি এই অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপর থেকে রাজ্য রাজনীতির অন্দরে একটিই প্রশ্ন ঘুরছিল, বাংলার মুসলমান সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে বিজেপির এজেন্ট কি অন্ধ্রপ্রদেশের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি? ঝোলা থেকে বিড়াল বের করে দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ বিজেপির অনুপম হাজরা। এমনই দাবি তৃণমূলের।
সম্প্রতি একাধিক বার নাম না করে অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদ মুসলমিন (মিম)-এর সমালোচনা করেছেন তৃণমূল।নেত্রী। নেপথ্যে থেকে বিজেপিই ওয়াইসির দলকে রাজ্যে মদত দিচ্ছে বলে স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন তিনি। তার প্রেক্ষিতে রাজ্যে ওয়াইসিকে স্বাগত জানিয়ে মমতার দাবির সত্যতাই স্বীকৃতি দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুপমের পোস্ট। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়রে মতে, বিজেপির অপারেশন আর গোপন রইল না। তাতেই বিড়ম্বনায় পড়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
অনুপম তাঁর ফেসবুক পেজে মন্তব্য করে বিজেপির গোপন ‘গেম প্ল্যান’ ফাঁস করে দিয়েছেন বলেই মনে করছেন তৃণমূল মহাসচিব। ওয়াইসি সম্পর্কে পার্থ বলেন, বাংলার সঙ্গে যাঁর কোনও সম্পর্ক নেই হঠাৎ তাঁকে তৎপর হতে হচ্ছে বিজেপিকে খুশি রাখতে। বিজেপির সেই গোপন এজেন্ডা এবার ধরা পড়ে গিয়েছে। অনুপমের দাবি, এবার বাংলায় মুসলিম সমাজে তৃণমূলের একচেটিয়া দখলদারি ঘুচে যাবে।
ওই পোস্টে ব্যঙ্গের সুরে বলা হয়েছে, এবার দিদির প্রতিযোগী ঢুকে গেল বাংলায়। তাই মিমের প্রধান সাংসদ ওয়াইসিকে বাংলায় স্বাগত জানিয়েছেন গত লোকসভা ভোটে বিজেপির পরাজিত প্রার্থী অনুপম। শুধু লিখেই থামেননি তিনি। নিজের পোস্টের সঙ্গেই ওয়াইসিকে স্বাগত জানানো দেওয়াল লিখনের দু’টি ছবিও দিয়েছেন। দলের প্রতীক আঁকা একটি দেওয়াল লিখনের ছবিও দিয়েছেন অনুপম।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অন্ধ্রপ্রদেশের একটি সংগঠন রাজ্যে বিজেপির মদতে কাজ করছে। স্বাভাবিক কারণেই বিজেপি তা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেনি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুপমের পোস্ট বিজেপি-ওয়াইসি গোপন বোঝাপড়া ফাঁস করে দিয়েছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। যদিও রাজ্য বিজেপির দাবি, অনুপমের বক্তব্যের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) ঘিরে রাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি উস্কে দিতে চাইছে বিজেপি। এই অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই তৃণমূল প্রতিবাদে পথে নেমেছে। মমতার কথায়, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বিচার করা চলবে না। তাঁর মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের উদ্দেশ্য হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন করা। ধর্মের ওপর ভিত্তি করে দেশের মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে চাইছে।
উল্লেখ্য, বাংলায় প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষের আস্থা অর্জন করেই মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন মমতা। বিজেপির হিন্দুত্ব যত উগ্র হয়েছে, ততই মুসলমান সমর্থনের ভিত শক্ত হয়েছে তৃণমূলের পক্ষে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এনআরসি সম্পর্কে বিজেপি বিশেষত বাংলায় যেভাবে সংখ্যালঘুদের নিশানা করেছে, তাতে মুসলমান ভোট তাদের পক্ষে শতচেষ্টা করেও ঘোরাতে পারবে না।
শুধু তাই নয়। যেভাবে ধর্ম-জাতপাতের ঊর্ধ্বে গিয়ে সর্বস্তরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা, তাতে কংগ্রেস ও বামদের যেটুকু ভোট অবশিষ্ট, তাতে মুসলমান ভোট থাকলে তাও তৃণমূলের ঘরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই কারণেই ভীত বিজেপির তরফে বাংলার মুসলমানদের মধ্যে ভাঙন ধরানোর কাজ সারতে ওয়াইসির মিমকে এ রাজ্যে আমদানি করা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।