দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। যা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দেশের বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। এমনকি বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছে আরএসএসের শাখা সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চও। কিন্তু ঘরে-বাইরে চাপ সত্ত্বেও লাভজনক সংস্থার বিলগ্নীকরণের রাস্তা থেকে সরছে না কেন্দ্র। সংসদে লিখিতভাবে সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে পারছে না বলেই লাভজনক হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, বেঙ্গল কেমিক্যাল সহ ৩৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিলগ্নীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে যেমন ক্ষতিতে চলা সংস্থা রয়েছে, তেমনি লাভজনক সংস্থাও রয়েছে। এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানিয়েছেন, আপাতত ৩৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণ হবে। তিনটি পর্যায়ে এই সংস্থাগুলি থেকে সরকারের অংশীদারি ছেড়ে দেওয়া হবে। কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই নয়। জয়েন্ট ভেঞ্চারের পাশাপাশি যেখানে সরকার ভর্তুকি দেয়, সেসব সংস্থারও বিলগ্নীকরণ হবে।
ইতিমধ্যেই হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড, রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন, হসপিটাল সার্ভিসেস কনসালটেন্সি লিমিটেড, ন্যাশনাল প্রোজেক্টস কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন এবং ড্রেজিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার বিলগ্নীকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে কেন্দ্র। প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পথে রয়েছে ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, আইটিডিসি, পবন হংস, এয়ার ইন্ডিয়ার মতো ২৩টি সংস্থা। পাশাপাশি, সম্প্রতি শিপিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া-সহ ৫ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিলগ্নীকরণ হবে বলে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও কেন বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে রাজ্যসভার সরকারের কাছে তা জানতে চান তৃণমূল সাংসদ নাদিমুল হক। তার লিখিত জবাবেই মন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর বলেছেন, প্রতিযোগিতামূলক সময়ে ওইসব সংস্থাগুলির আরও আধুনিকীরণ প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হাতে গেলে তা সম্ভব হবে। এই জবাব পেয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল। লাভজনক সংস্থাকেও কেন বিক্রি করা হবে? প্রশ্ন মমতার দলের। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করা হবে বলেই ঠিক করেছে তারা।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণের বিরোধিতায় বাজেট অধিবেশনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল তৃণমূল সংসদীয় দল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও কেন বিএসএনএল, এমটিএনএলের মতো সংস্থাকে বিক্রির পরিকল্পনা হচ্ছে, তা এবার সভার মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর মুখ থেকে জানতে চায় তৃণমূল। সেই মতো রাজ্যসভায় ‘কলিং অ্যাটেনশনে’র নোটিস জমা দিয়েছে টিএমসি। তৃণমূলনেত্রীর পরিকল্পনা মতো নোটিসটি দিয়েছেন দলের শ্রমিক নেত্রী দোলা সেন। তৃণমূলের রাজ্যসভার ডেপুটি লিডার সুখেন্দুশেখর রায়ের প্রশ্ন, কেন্দ্র যখন নিজেই বলছে, লাভজনক সংস্থাও বিক্রি করে দেওয়া হবে, তাহলে মোদী সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্যটা কী? দেশটাকেই বেচে দেওয়া?