কলকাতা : জটিল অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করে ফের নজির গড়ল এসএসকেএম হাসপাতাল।(SSKM Hospital) কনুইয়ের কিছুটা নীচ থেকে আড়াআড়ি ভাবে কেটে পড়ে গিয়েছিল এক ব্যক্তির হাত। কাটা হাত জোড়া লাগানো যায়, শুধু এটুকুই জানতেন তিনি। তাই নিজের কাটা হাতটি ব্যাগে ভরে অন্যের বাইকে চেপে পৌঁছে গিয়েছিলেন স্থানীয় হাসপাতালে। সেখান থেকে এলেন এসএসকেএমে। প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন থেকে তিনটি অস্ত্রোপচারের পরে রক্ষা পেল সেই হাত। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরলেন উক্ত ব্যক্তি।
Read More: ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’কে ‘লজ্জাজনক’ তকমা ট্রাম্পের, উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রসংঘও
কৌশিক ঘোষ নামে ওই ব্যক্তি।পেশায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সারানোর মিস্ত্রি। তিনি বর্ধমানের চাঁচাইয়ের বাসিন্দা। গত ২১ মার্চ সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি তেলের কারখানায় যন্ত্র (ঘানি) মেরামত করতে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ করার সময়ে আচমকাই কৌশিকের ডান হাতে থাকা স্টিলের বালাটি কব্জির কাছে নেমে আসে। আর সেটি ওই যন্ত্রের একটি নাটবল্টুর সঙ্গে আটকে যাওয়ায় হাতটি যন্ত্রের ভিতরে ঢুকে যায়। তাতেই কনুইয়ের কিছুটা নীচ থেকে পুরো আড়াআড়ি ভাবে কেটে মাটিতে পড়ে যায় ডান হাতের বাকি অংশ।

কৌশিক জানিয়েছেন, ‘‘শুনেছিলাম, কাটা হাত জোড়া লাগানো যায়। তাই আর দেরি না
করে কাটা হাতটি ব্যাগে ভরে, কনুইয়ের নীচে কাপড় জড়িয়ে ওই কারখানার মালিকের বাইকে চেপে স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাই।’’ ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে তড়িঘড়ি কৌশিককে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কৌশিকের ভাই শৌভিক জানান, বর্ধমান থেকে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, সেখান থেকে বিকেল ৫টা নাগাদ এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে পৌঁছন তাঁরা। শৌভিকের কথায়, ‘‘কাটা হাত জোড়া লাগানো যায়, শুধু এটুকুই আমরা জানতাম। কিন্তু, কাটা হাতটি কী ভাবে সংরক্ষণ করে আনতে হয়, তা জানা ছিল না। তাই অস্ত্রোপচারে কিছুটা ঝুঁকি ছিল।’’
এবিষয়ে এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা(SSKM Hospital) জানাচ্ছেন, সাধারণত ঘটনার ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে কাটা অঙ্গটির পুনঃস্থাপন করতে হয়। কিন্তু কৌশিক হাসপাতালে পৌঁছনই প্রায় ছ’ঘণ্টা পরে। হাতের কাটা অংশটিও যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করে আনা হয়নি। তাই পুনঃস্থাপনের আগে রোগীর পরিজনদের ঝুঁকির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২১ মার্চ রাত সাড়ে ৮টা থেকে ট্রমা কেয়ারে কৌশিকের কাটা হাত জোড়া লাগানোর অস্ত্রোপচার শুরু হয়। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক তীবর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কল্যাণ দাস, শুভম কেজরিওয়াল, রাজীব কুমার, করণ খাণ্ডেলওয়াল, সুশোভন সাহা, অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁদের দল প্রায় ন’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগান কাটা হাতটি।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1920109488549531663
চিকিৎসক কল্যাণ দাসের কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচারে ধমনী, শিরা, স্নায়ু, হাড় সব কিছু জোড়া লাগানো হয়। এর পরে সাত দিন আইটিইউ-তে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে আচমকাই মারাত্মক সংক্রমণে হাতের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। তবে, কড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।’’ সংক্রমণ কমার পরে কৌশিককে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়।
প্রায় দেড় মাস পরে এ দিন বাড়ি ফেরার সময়ে কৌশিক বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা সব সময় মনে জোর দিতেন। আমারও বিশ্বাস ছিল, হাত আবার জোড়া লাগবে। দেরি হলেও এই হাতেই আবারও মেশিন সারাব।’’ তাঁর কনুইয়ের নীচের যে অংশ থেকে হাতটি কেটে পড়ে গিয়েছিল, সেখানে বেশ খানিকটা জায়গায় টিসু ও মাংসপেশি বাদ চলে গিয়েছিল। ১৪ এপ্রিল বাঁ পায়ের ঊরু থেকে টিসু, মাংস, চামড়া নিয়ে প্রায় ছ’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। এর পরে বেশ কিছু দিন আইসিইউ-তে থাকতে হয়েছিল কৌশিককে। কল্যাণ দাস বলেন, ‘‘হাতটিতে ধীরে ধীরে অনুভূতি, কার্যক্ষমতা ফিরবে। তার জন্য আগামী দিনে ছোটখাটো কয়েকটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে। তবে, জোড়া লাগানোর পরে রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়ে গিয়েছে, অর্থাৎ হাতটি বেঁচে গিয়েছে বলা যায়।’’