ফারাক্কা: একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল যখন যেনতেনপ্রকারেণ সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াতে মরিয়া, ঠিক তখনই সম্প্রীতির অনন্য ছবির সাক্ষী রইল বাংলা। হিন্দু প্রতিবেশীর বাড়ি আগলে রাখলেন মুসলিমরাই। ঠিক যেন ‘একই বৃন্তে দুটি কুসুম’। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অশান্ত সামশেরগঞ্জ ব্লক। আর সেই আবহেই পূর্ব রতনপুরের বাসিন্দারা বাঁধলেন ঐক্যের সুর।
এলাকার বাসিন্দা সানাউল শেখ ও তাঁর ভাই উকিল শেখের বাড়ির উলটো দিকেই বাড়ি মানিক দাসের। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে সৃষ্ট অশান্তির আঁচ গায়ে লাগতে দেননি সানাউল, উকিলরা। আগাগোড়া মানিকের পাশেই থেকেছেন। বুক পেতে রক্ষা করেছেন বন্ধুকে। মানিক জানিয়েছেন, “আমার বাড়িতে হামলা করতে আসে বেশ কিছু বহিরাগত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। পরিবার নিয়ে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
খবর পাওয়ামাত্রই মানিকের বাড়ি আক্রমণ থেকে বাঁচাতে প্রাণের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হননি সানাউল ও তাঁর ভাই উকিল শেখ। দাঙ্গাবাজদের সরিয়ে দিতে তাঁরা সক্ষম হলেও কিছুক্ষণ পর আবার অস্ত্র নিয়ে চরাও হয় তারা। সানাউল বলেন, “সেই সমস্ত বহিরাগতদের প্রথমে বহু কষ্টে সরানোর পর আবার দেখি কিছুক্ষণ পর অস্ত্র নিয়ে হাজির ওরা। ওদের বলি শান্তিতে থাকতে দে। আমরা হিন্দু-মুসলমান যুদ্ধ চাইছি না। ওদের বাড়ির তরকারি আমরা খাই। আমাদের খাবার ওরা খায়। আমরা কোনওভাবেই ওদের উপর হামলা হতে দেব না। বারবার তাড়াচ্ছি তাও চলে আসছিল। সকলে মিলে আমরা রুখে দাঁড়ালে ওরা পালিয়ে যায়।”
আর এক স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ সাহা জানান, “পূর্ব রতনপুরে প্রায় ৮৫ শতাংশ মুসলিম পরিবার বাস করেন। হিন্দু ১৫ শতাংশ। আমরা খুব শান্তিতে আছি। একসঙ্গে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করি। সুখে শান্তিতে আছি। এখানে কোনও ঝামেলা নেই। পুজোর সময় আমরা ওদের নিমন্ত্রণ করি। ঈদে আমাদের নিমন্ত্রণ করে। আমরা বিভেদ বুঝিনা। সেই রীতি বজায় রেখে এই অস্বস্তি রক্ষার লড়াইয়ে আমাদের বুকে আগলে রেখেছে ওরা।”