প্রতিবেদন : ‘ভূতুড়ে’ ভোটার-ইস্যুতে ইতিমধ্যেই সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তালিকা ধরে ধরে ভোটার তালিকার গরমিল সামনে এনে প্রমাণ করে দিয়েছেন, বিজেপিকে সাহায্য করতে কীভাবে প্রত্যেক রাজ্যে বাইরের ভোটার ঢুকিয়ে যোগ্য ভোটারদের ভোট বাতিলের কারচুপি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যজুড়ে ভুয়ো বা ‘ভূতুড়ে’ ভোটার ধরতে একটি কোর কমিটি গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। এবার সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দুর্নীতি নিয়ে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানাল তৃণমূল কংগ্রেস।
সোমবার দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টার মধ্যে কমিশন তাদের যাবতীয় ত্রুটি স্বীকার করে বিবৃতি না দিলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ভোটার কার্ডের দুর্নীতির নতুন প্রমাণ পেশ করা হবে। তৃণমূলের দাবি, অবিলম্বে এই ফৌজদারি অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে। বিজেপির মদতপুষ্ট এই চক্রান্তের মূলচক্রী কে, তাকে খুঁজে বের করতে হবে। এই মর্মে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূলের রাজ্যসভায় ডেপুটি লিডার সাগরিকা ঘোষ এবং লোকসভার তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদও।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোরে আয়োজিত দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়েই তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাংলার ভোটারদের মধ্যে ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে দিচ্ছে বিজেপি৷ রাজ্যের ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্র বা এপিক কার্ডের নম্বরের সঙ্গে কীভাবে অন্য রাজ্যের ভোটারদের এপিক নম্বর এক হয়ে যায়, প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, বাংলার সর্বত্র ভুয়ো ভোটার ধরার জন্য অভিযান চালানো হবে৷ এত বড় ঘটনার পরে সামান্য বিবৃতি দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ এমতাবস্থায় বড় রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে এগোলো তৃণমূল। তাদের দাবি, মার্চ, এপ্রিল ও মে, এই তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকার যাবতীয় ত্রুটি সংশোধন করতে হবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার ডেপুটি লিডার সাগরিকা ঘোষ জানান, “এটা একটা প্রতারণা৷ বাংলার ভোটারদের আসল এপিক কার্ড ব্যবহার করছে অন্য রাজ্যের ব্যক্তি৷ আমরা কি ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, পাসপোর্টের ডুপ্লিকেট দেখতে পাই? তাহলে এপিক কার্ড ডুপ্লিকেট কেন হবে? জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কোনও আধিকারিক এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে খুঁজে বার করা হোক৷ এর তদন্ত হোক৷ প্রধানমন্ত্রী যেভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চাইছেন, তা হতে দেব না৷ আমরা লড়াই করব, গণতন্ত্রকে রক্ষা করব৷”
জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ কীর্তি আজাদও৷ তাঁর কটাক্ষ, “সুপ্রিম কোর্ট একবার সিবিআইকে খাঁচায় বন্ধ তোতাপাখি বলেছিল? আমার প্রশ্ন, নির্বাচন কমিশন কি খাঁচায় বন্ধ ময়না?” ভুয়ো ভোটার নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সুর চড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ইন্ডিয়া জোটের সদস্য ৫টি রাজনৈতিক দল তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে, এমনটাই দাবি করেছে দলীয় সূত্র৷ কয়েক মাসের মধ্যেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন৷ উক্ত ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল৷ এই ইস্যুটিকে অস্ত্র করেই আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে চলা সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে লোকসভা ও রাজ্যসভায় সরব হবে তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি।