নয়াদিল্লি: ২০১৮ সালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা সর্বসম্মতিক্রমে রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে বাংলা করার একটি প্রস্তাব পাস করে। রাজ্য সরকার এই প্রস্তাবের সমর্থনে সমস্ত রকমের ব্যাখ্যো স্পষ্ট করে জানায়। জাতীয় স্তরেও নাম পরিবর্তনের দাবিকে নিয়ে সক্রিয় হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘পশ্চিমবঙ্গ’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার এই দীর্ঘদিনের দাবি নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় সোচ্চার হলেন সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সর্বসম্মত প্রস্তাব মেনে রাজ্যের নাম অবিলম্বে বাংলা করা হোক – রাজ্যসভায় দাবি তুললেন তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
Posted by Ekhon Khobor on Monday, February 3, 2025
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে একটি চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে জানিয়েছিলেন, যে এই নাম পরিবর্তন রাজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অনন্য পরিচয়কে প্রতিফলিত করবে। ‘বাংলা’ নামটি গ্রহণ করার নেপথ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক কিছু ব্যাখ্যা, এবার সেই ইতিহাসকেই হাতিয়ার করে জোরাল বক্তব্যের মাধ্যমে রাজ্যসভায় নাম পরিবর্তনের দাবি রাখলেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটি ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের পর গৃহীত হয়, যখন পূর্ব অংশটি পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম অংশ পশ্চিমবঙ্গ হিসেবে পরিচয় পায়। এই মর্মে তিনি জানান, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের পর ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামের ন্যায্যতা আর প্রাসঙ্গিক নয়।
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯০৫ সালে বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লর্ড কার্জন। বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের পরে সারা বাংলা গর্জে উঠেছিল প্রতিবাদে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে অন্য রূপ নেয় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিক দেশাত্মবোধক গানও লেখেন যা এই আন্দোলনের সুর হয়ে ওঠে। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি’ রবিঠাকুরের এই গান বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের স্লোগান হয়ে ওঠে। এই ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানিয়েই ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটিকে ঐতিহ্যমণ্ডিত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যসভায় ‘বাংলা’ নামটি গ্রহণ করার দাবি তুলে তিনি আরও বলেন, পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হয়ে যাওয়ার পরে পূর্ববঙ্গ নামটির অস্তিত্ব এখন আর কোথাও নেই। একমাত্র একটি ১০৫ বছর পুরনো ফুটবল ক্লাবের নাম হিসেবে এই ‘ইস্টবেঙ্গল’ নামটি বিখ্যাত। ছিল্লমূল মানুষের লড়াইয়ের এবং হার না মানার প্রতীক হিসেবে ‘ইস্টবেঙ্গল’ দলটি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এই মর্মে তিনি বলেন, এটি সরকারের দায়িত্ব যে বাংলার ১০ কোটি মানুষের ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানানো এবং দেশের কাঠামো ও সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুসারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দাবি মেনে পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাবকে গ্রহণ করা।