মেরুকরণের সঙ্গে বিজেপির গলায়-গলায় সখ্যের কাহিনী ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় অজানা নয় একেবারেই। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিক স্বার্থে বারবারই তাদের আস্তিন থেকে সুকৌশলে ধর্মীয় বিভাজনের তাস বের করেছে মোদী সরকার। পাশাপাশি, কেবলমাত্র ভোটে জেতার উদ্দেশ্যে কীভাবে ষড়যন্ত্রের কদর্য খেলা খেলতে হয়, সন্দেশখালির ঘটনায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ দিয়েছে বিজেপি। সদ্যপ্রকাশিত বইয়ে এভাবেই বাংলার বিরুদ্ধে গেরুয়াশিবিরের চক্রান্তের ইতিবৃত্ত তুলে ধরলেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবছর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা ‘বাংলার নির্বাচন ও আমরা’ নামে বইটি। সেখানে উঠে এসেছে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রয়োজনীয়তা এবং খামতির দিকগুলি। জোট রাজনীতির সুফল কীভাবে কংগ্রেস পেয়েছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম প্রধান মুখ মমতা।
বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময় বাংলা তো বটেই, সারা দেশের রাজনৈতিক চিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ফেলে দিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির ঘটনা। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বইতে মমতা লিখেছেন, “ভোটের আগে সব থেকে ভয়াবহ ন্যাক্কারজনক যে ঘটনা এই বাংলায় ঘটিয়েছিল বিজেপি, তা হল সন্দেশখালির ঘটনা। রাজ্য এবং রাজ্যের নারীদের সম্ভ্রম ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে ভোটে জেতার ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছিল বিজেপি। আমরা দেখলাম, সন্দেশখালিতে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল বিজেপি এবং তার সুরে সুর মিলিয়ে নেচেছিল বাম ও কংগ্রেস। কিন্তু দ্রুতই পর্দা ফাঁস হল সেই ঘটনার। আমরা সবাই দেখলাম, এই ধর্ষণের অভিযোগ গোটাটাই মিথ্যে। মহিলাদের শিখিয়ে-পড়িয়ে রীতিমতো ট্রেনিং দিয়ে করানো হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগ। …২০২৪ সালের মতো এত চক্রান্তের নির্বাচন আগে দেখিনি।”
পাশাপাশি, বিজেপি-বাম-কংগ্রেসের অনৈতিক জোট নিয়েও বারবার সরব হয়েছেন মমতা। বিরোধীদের একযোগে নিশানা করে লিখেছেন, “তাদের রাজনীতিতে আদর্শ নেই, নেই নৈতিকতা।” স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তিনি কটাক্ষে বিঁধেছেন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালকে। লিখেছেন, “আচ্ছে দিনের বদলে যে দুর্দিন নেমে এসেছে, ভারতবাসী তা প্রত্যক্ষ করছে। …গত পাঁচ বছরে বিজেপি শাসনে আমরা দেখেছি, বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রই বিপন্ন।” ‘ইন্ডিয়া’ জোট প্রসঙ্গে লিখেছেন, “২০২৪-এর নির্বাচনে আমরা আন্তরিকভাবে চেয়েছিলাম, বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় একটি শক্তিশালী জোট হোক। জোটের নাম ইন্ডিয়া হোক, এটা আমার প্রস্তাব ছিল। বিকল্প মুখ, ইস্তাহার এবং কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম থাকা উচিত। কিন্তু তা হল না। যে যার বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করল। ফলে আমাদের ব্যর্থতার কারণেই মাত্র কিছু আসনের ব্যবধানে বিজেপি ক্ষমতায় এল। তাও এককভাবে নয়।”
এছাড়া, নতুন বইটিতে কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। “রাজ্যে রাজ্যে যে সমস্ত বিরোধী দল ছিল, তাদের মধ্যে কিন্তু কোনও সমস্যা ছিল না। কী কারণে বা কেন ইন্ডিয়া জোটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হল যারা, তাদের মনে রাখা দরকার, তারা যা আসন পেয়েছেন তার বেশিরভাগটা কিন্তু রাজ্যগুলির সঙ্গে আসন রফা করে। এককভাবে কিছু করা সম্ভব ছিল না। তামিলনাড়ু বলুন বা উত্তরপ্রদেশ বলুন বা ঝাড়খণ্ড বলুন, সব জায়গাতেই কংগ্রেস কিন্তু জোট রাজনীতির সুফল পেয়েছে”, স্পষ্ট জানান তিনি।