রবিবার দেশের ৭৬তম সাধারণতন্ত্র দিবসে দেশবাসীকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একতা, সম্প্রীতি ও অন্তর্ভুক্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখার কথা বললেন তিনি। দেশবাসীকে সাধারণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে রবিবার মমতা সমাজমাধ্যমে লেখেন, “আজকের এই বিশেষ দিনে আমাদের সকলকে শপথ নিতে হবে সংবিধানের মূল ভিত্তি সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র এবং সর্বোপরি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে অক্ষুণ্ন রাখার।” এদিন রেড রোডে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে পূর্ণ মর্যাদায় পালিত হয় সাধারণতন্ত্র দিবস। কুচকাওয়াজের মঞ্চে অভিবাদন গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বার্তা, “আমাদের ধাত্রীভূমিকে স্বাধীনতার মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ যাঁরা করে দিয়েছিলেন, সেই সকল বীর শহিদকে আজকের দিনে বিনম্র চিত্তে প্রণাম জানাই। আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব আম্বেদকর-সহ সকল সংবিধান রচয়িতাকে। পাশাপাশি, দেশের সকল সহ-নাগরিককে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমাদের আজকের শপথ হোক জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি ও সর্বধর্ম সমন্বয়ের পরম্পরার এবং মহান ঐতিহ্যের সুদৃঢ় বন্ধনকে অটুট রাখার। এক্স বার্তায় তিনি আরও জানান, এই দিনটি শুধু স্মরণ করার নয়, এই দিনটি সংবিধান নির্দেশক নীতিগুলির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণের। আমাদের প্রজাতন্ত্রের শক্তি জনগণের শক্তিতে প্রতিফলিত হোক। আমরা যেন সবসময় সেই মূল্যবোধকে রক্ষা ও লালন করার চেষ্টা করি যা ভারতকে মহান করে তোলে।”
এদিন রাজ্য সরকার আয়োজিত সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের পরতে পরতে ছিল বহুত্বের বার্তা। যার মধ্যে ছিল দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহী কুকরি নাচ থেকে শুরু করে জঙ্গলমহলের সাঁওতালি নাচ, বাউল গান। বাংলার নানা প্রান্তের বিচিত্র সাংস্কৃতিক সম্পদকেই তুলে ধরা হয় রেড রোডের সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে। ঐক্যের ভাবনাকে সামনে রেখেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার স্কুলের পড়ুয়া এবং রাজ্য সরকারের লোক প্রসার প্রকল্পের শিল্পীরা তুলে ধরলেন রাজ্যের বর্ণময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। প্রথা অনুযায়ী জাতীয় পতাকা উন্মোচন করে কুচকাওয়াজের সূচনা করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তারপর প্রদর্শিত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর শৌর্যের প্রতীক সমরাস্ত্র পিনাক, মাল্টি-ব্যারল রকেট লঞ্চার, সেনার অত্যাধুনিক গাড়ি রণজিৎ, রণবিজয়, ঐরাবত। দুর্গম বন্ধুর পথ ধরেও এই গাড়ি অনায়াসে পৌঁছে যায় যুদ্ধক্ষেত্রে। কলকাতার রেড রোডে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে এবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘রোবট সারমেয়’। যার পোশাকি নাম হল ‘মাল্টি ইউটিলিটি লেগ্ড ইকুইপমেন্ট’ সংক্ষেপে মিউল। সঞ্জয় নামে ওই রোবট সারমেয়দের কসরত মনজয় করে নেয় সকলেরই। এছাড়া প্যারা স্পেশাল ফোর্স কমান্ডো বাহিনী রেড ডেভিলস, রাজপুতানা রাইফেলস থেকে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, কলকাতা পুলিশের র্যা ফ, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট আর্মড পুলিশের ব্রাস ব্যান্ড টানটান করে রেখেছিল নয়নাভিরাম কুচকাওয়াজের প্রতিটা মূহূর্ত। এর পাশাপাশি রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের মহিলা র্যাফ বাহিনী, বাইক আরোহী উইনার্স টিম কুচকাওয়াজে নজর কাড়ে। এরপর বিভিন্ন জেলার স্কুলের পড়ুয়া এবং রাজ্য সরকারের লোক প্রসার প্রকল্পের শিল্পীরা তুলে ধরেন রাজ্যের বর্ণময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়করাও। পাশাপাশি, বিদেশি অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন।