Mamata Banerjee ক্ষমতার আসার পর থেকেই একাধিকবার ছলে-বলে-কৌশলে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ চালু করতে উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। এবং তা সম্পূর্ণ গণতন্ত্রের উল্টো পথে হেঁটেই। বিরোধীদের মতামতের বিলকুল তোয়াক্কা না করে ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি কার্যকর করার পথে আরও এক ধাপ এগোল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সবুজ সংত দেওয়া হয়েছে এই নীতিতে। সূত্রের খবর, সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই এই বিষয়ে বিল পেশ করতে পারে কেন্দ্র। এর বিরুদ্ধে ফের দৃঢ় স্বরে সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “বিরোধীরা সঙ্গত উদ্বেগ জানালেও এক দেশ এক ভোট বিল নিয়ে বুলডোজার চালাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এটা শুধু অসাংবিধানিক নয়, এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী”, এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন তিনি।
Read More: শৈলেন মান্না সরণি – কিংবদন্তি ফুটবলারের নামে হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানেল রোডের নামকরণ মুখ্যমন্ত্রী
পাশাপাশি, মমতা আরও বলেন, “এটি কোনও সুষ্ঠুভাবে বিবেচিত সংস্কার নয়; এটি একটি স্বৈরাচারী পদক্ষেপ, যা ভারতের গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে”। তৃণমূলনেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দলের সাংসদরা কঠোরভাবে বিরোধিতা করবেন এই জনবিরোধী বিলটির। তাঁর কথায়,“বাংলা কখনওই দিল্লৈর একনায়কতন্ত্রী সিদ্ধান্তের কাছে নত হবে না। এই সংগ্রাম ভারতের গণতন্ত্রকে স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা করার লড়াই!” বহুদিন যাবৎ ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে বিজেপি অনেক দিন ধরেই আগ্রহী। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারেও এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এই নিয়ম কার্যকর হলে সারা দেশে একসঙ্গে লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনের আয়োজন করবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে খ খুলেছেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন লোকসভার স্পিকারকে। “ওদের ভাঁওতা আমি আগেই ধরে ফেলেছিলাম। দু’বছর আগে মহারাষ্ট্রে সর্বভারতীয় স্পিকার সম্মেলনে একদিন ওঁরা সরাসরি না বললেও ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট-এর আদলে একটি রেজলিউশন এনেছিল। লোকসভার স্পিকারকে বলেছিলাম, আপনারা যে রেজলিউশন এনেছেন সেটা তো ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট থিওরির দিকেই ইঙ্গিত করছে”, জানান তিনি।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1867484864498303014?s=19
এই নীতির পিছনে একাধিক কারণও তুলে ধরেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। “প্রথমত, ভারতের মতো দেশে এই এক দেশ এক ভোট একটি অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক ধারণা। তৃণমূল কোনও অবস্থাতেই একে সমর্থন করবে না। আমাদের যে পরিকাঠামো, গঠন, ফেডারেল স্ট্রাকচার ও যে পরিস্থিতি তাতে এটা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, প্রতিটি রাজ্যের আলাদা ইতিহাস, আলাদা ভূগোল, আলাদা সংস্কৃতি ও আলাদা নির্বাচনী রসায়ন রয়েছে। সে-সবগুলিকে এক জায়গায় নিয়ে এসে একদিনেই সব জায়গায় নির্বাচন, এটা কোনও ভাবেই বিজ্ঞানসম্মত হতে পারে না। তৃতীয়ত, জনগণ ভোট দেয় ৫ বছরের জন্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সরকার ভাঙাগড়া হয়ে যায় ৫ বছরের আগেই। কিছুদিন আগেই মহারাষ্ট্রে সরকার ফেলে দেওয়ার নজির আছে বিজেপির। তখন ওই রাজ্যে ফের নির্বাচন করতে হয়। তখন এটা কীভাবে সম্ভব? আমাদের দেশে লোকসভা ও বিধানসভার অন্তর্বর্তী নির্বাচনের একাধিক উদাহরণ রয়েছে। ফলে আমরা কোনও অবস্থাতেই এই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এগোতে দিতে পারি না।
চতুর্থত, এখানে লোকসভা, বিধানসভা ও পুরসভার নির্বাচনের প্যাটার্ন আলাদা, অভিমুখ আলাদা। লোকসভার ভোটে একজন নাগরিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে ভোট দেন। বিধানসভা ও স্থানীয় স্তরের ভোট আলাদা। এক্ষেত্রে যদি সব ধরনের ভোট একই দিনে করা তাহলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে অভিমুখ নিয়ে বিভ্রান্ত তৈরি হবে।
পঞ্চমত, এটা শুরু করা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। কারণ, কোথা থেকে শুরু করবেন। যখনই শুরু করুন না কেন সেখানে তো একটা সরকার রয়েছে। সবাই তো মেয়াদ সম্পূর্ণ করেনি। তাহলে সেখানে কী করা হবে!”, সাফ জানিয়েছেন তিনি।