বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই রাজ্যবাসীর জন্য একাধিক জনমুখী প্রকল্পের সূচনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহিলাদের উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কৃষকবন্ধু ইত্যাদি প্রকল্পগুলি বড় অবদান রেখেছে ও ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। বিশ্বদরবারে বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে কন্যাশ্রী। বাংলার বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা আকছার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিকে কুৎসিত আক্রমণ করেন। অথচ, অন্যান্য রাজ্যে সেই মডেলই নির্লজ্জভাবে অনুকরণ করছে বিজেপি ও কংগ্রেস। মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের আগেও বঙ্গের তৃণমূল সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিকে ‘নকল’ করার হিড়িক পড়ে গিয়েছে! একদিকে বাংলায় ক্ষমতায় এলে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা, তখনই মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোট সরকার অনুকরণ করছে ‘বাংলা মডেল’কেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পের ধাঁচে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ‘লাডকি বহিন’ প্রকল্প চালু করেছে। সেই টাকার অঙ্কবৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন প্রচারে নেমেছে শাসক বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপি (অজিত পাওয়ার) জোট এবং বিরোধী কংগ্রেস-শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে)-এনসিপি (শারদ পাওয়ার)-এর ‘মহাবিকাশ আঘাড়ি’। ২০২১-এ বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের পরেই মহিলাদের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ চালু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই প্রকল্পের অর্থবৃদ্ধি করা হয়। মহারাষ্ট্র-সহ দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্যই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে’র অনুকরণে প্রকল্প ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার, কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারও ইতিমধ্যেই বাংলার উন্নয়নের মডেল অনুকরণ করেই এসেছে ক্ষমতায়।
উল্লেখ্য, মারাঠাভূমিতে প্রায় দু’সপ্তাহ পরেই বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের বাক্সে সাফল্য পেতে বাংলার পথে হেঁটে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের ধাঁচে কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ‘লাডকি বহিন’ প্রকল্প চালু করেছিল। এতে মহিলাদের মাসে ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। ভোট প্রচারে কোলাপুরে বিজেপির জোটের সভায় শিন্ডে প্রতিশ্রুতি দেন, বিধানসভা ভোটে জিতলে এই ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করা হবে। এরপরেই বুধবার মুম্বইয়ে প্রচারে বিরোধীদের ‘মহাবিকাশ আঘাড়ি’র যৌথ প্রচার মঞ্চ থেকে রাহুল গান্ধী, শারদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরেরা প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে ‘মহালক্ষ্মী যোজনা’ চালু করবেন। সেখানে মহিলাদের মাসে ৩ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, বাংলায় যে কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহারাষ্ট্রে সেই মডেল সামনে রেখেই প্রতিশ্রুতি ঝড় বইয়ে দিচ্ছে শাসক-বিরোধী সবপক্ষ। কৃষিঋণ মকুবের পাশাপাশি বার্ষিক আর্থিক সহায়তা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ‘মহাজুটি’। কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের উপরেও অতিরিক্ত ২০ শতাংশ ভরতুকি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইস্তাহারে। এর পাশাপাশি, প্রবীণদের মাসিক পেনশন ১৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করা এবং ১০ লক্ষ পড়ুয়াকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। বছরে ২৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার রয়েছে। এর পাশাপাশি তৃণমূলের ইস্তেহারে উল্লিখিত ‘দিদির শপথ-১০ অঙ্গীকার’-এর আদলেই কোলাপুরের সভায় ১০টি ‘গ্যারান্টি’র ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে। তারই জবাব হিসেবে পাঁচ ‘গ্যারান্টি’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাহুল-শারদ-উদ্ধবরা। বেকারদের ৪০০০ টাকা মাসিক অর্থ সাহায্য, ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মকুব, ২৫ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্যবিমা এবং জাতগণনা করে তার রিপোর্টের ভিত্তিতে সংরক্ষণের ৫০ শতাংশ ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে আঘাড়িদের তরফে। অর্থাৎ, তৃণমূলের প্রকল্পগুলিকে ‘ভিক্ষা’, ‘দান-খয়রাতি’ বলে কটাক্ষ করার পর ক্ষমতায় থাকতে সেই প্রকল্পেরই আশ্রয় নিতে হচ্ছে শাসক, বিরোধী উভয় শিবিরকে।